অষ্টমীর স্নান উপলক্ষে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পুণ্যতোয়া খ্যাত ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী অষ্টমীর স্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্নান উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্র তীরে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল নামে। শনিবার (৯ এপ্রিল) উপজেলার রাজারভিটা এলাকায় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিট ৩ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ১০টা ৩ মিনিট ৫১ সেকেন্ড পর্যন্ত উত্তম লগ্ন ধার্য করে এ স্নান উৎসব উদযাপিত হয়।
শনিবার সকাল থেকেই ‘হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য, তুমি আমার পাপ হরণ করো’ মন্ত্র উচ্চারণ করে ব্রহ্মার কাছে কৃপা চেয়ে স্নান উৎসবে মেতে ওঠেন পুণ্যার্থীরা। প্রায় ৪শ’ বছর ধরে প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এ পুণ্যস্নান সম্পন্ন করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রের এ স্থানটিকে তারা তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচনা করেন। হিন্দু ধর্ম মতে, এটি একটি পুণ্য কর্ম এবং এই স্নানের মাধ্যমে তাদের পাপমোচন ঘটে।
স্নান উপলক্ষে চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র তীরে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পুণ্যার্থীদের বিচরণ হয়। উপজেলা প্রশাসন ও স্নান উৎসব কমিটির দেওয়া তথ্য মতে, এবারে তিন লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে। লগ্ন অনুযায়ী নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে ধর্মীয় এ স্নান সেরে নেন আগতরা। স্নান উৎসব নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয় উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি স্নান ও মেলা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করাসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়।
স্নানে অংশ নেওয়া রংপুর থেকে আসা ঝুমা পাল বলেন, ‘এ নদে স্নান করার মাধ্যমে আমরা জীবনের পাপ থেকে পরিত্রাণ নিয়ে পবিত্রতা অর্জন করি। স্রষ্টা এর মাধ্যমে আমাদের অতীতের পাপ থেকে মুক্ত করবেন, এই বিশ্বাস থেকে এসেছি।’
ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে পুণ্যার্থী নির্মলা রানী ও শিউলি রানী বলেন, ‘লাখো মানুষের সমাগমে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা বজায় ছিল। তবে অষ্টমীর স্নানের জন্য স্থায়ী ও নির্দিষ্ট ব্যবস্থা হলে আমাদের জন্য ভালো হয়।’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে স্নান উৎসব কমিটির আহ্বায়ক বিষু চন্দ্র বর্মণ জানান, দেশ-বিদেশ থেকে তিন লাখেরও বেশি পুণ্যার্থী স্নান উৎসবে যোগ দেন। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় আগের তুলনায় এ বছর পুণ্যার্থীর উপস্থিতি অনেক বেশি।