বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আশ্বিনের আর একদিন বাকি। হেমন্ত দুয়ারে কড়া নাড়লেও দেশে মৌসুমি বায়ু এখনও সক্রিয়। আর এর প্রভাবে আবহাওয়া এখনও উষ্ণ। তবে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। একারণে নতুন করে আর এর প্রভাবে আর বৃষ্টির শঙ্কা নেই।
আবহাওয়াবিদরা আরও বলছেন, বাতাসের গতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চলতি মাসের শেষ দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে, অনুভূত হবে শীত মৌসুম। তবে রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে শীত পড়তে সময় লাগে বলে জানিয়েছেন তারা। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, যানবাহন ও জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে শহরের তাপমাত্রা তুলনামূলক সবসময় একটু বেশিই থাকে। তবে এবারও গতবছরের মতো সময়েই শীত আসছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, আগামী দুই একদিনের মধ্যে বাংলাদেশের আকাশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নেবে। ফলে এর প্রভাবে যে সারাদেশে বৃষ্টি হচ্ছিল, সেটি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এরমধ্যে উপকূলে লঘুচাপের সৃষ্টি হলে, সেকারণে বৃষ্টি হতে পারে।
মৌসুমি বায়ু চলে যাওয়ার পর কবে নাগাদ শীত নামতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ দিকেই উত্তরাঞ্চলের দিকে বাতাসের গতির পরিবর্তন ঘটবে। এরপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে তাপমাত্রা। তবে অন্য এলাকার তাপমাত্রা কমতে আর সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।
শীত কি এবার আগে নাকি অন্য সময়ের তুলনায় দেরিতে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বছরের মতো সময়েই শীত আসতে শুরু করবে, আপাতত আমাদের এমনটাই মনে হচ্ছে। তবে বাতাসের গতি পরিবর্তনের উপর সবকিছু নির্ভর করছে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল হতে বিদায় নিতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
এদিকে অক্টোবর মাসের দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে দুইটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে হতে পারে। এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে।
এ মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিন দিন বিজলি চমকানোসহ মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় এবং সারাদেশে তিন থেকে চার দিন বিজলি চমকানোসহ হালকা বজ্রঝড় হতে পারে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
উত্তরাঞ্চলের চলতি মাসের শেষ দিকে শীত অনুভূত হলেও অন্য এলাকায় দেরি কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, আসলে আমাদের দেশের গ্রামগুলোর তুলনায় শহরের জনসংখ্যা বেশি। এদিকে যানবাহন চলাচল, শিল্প কারখানার কারণে তাপমাত্রা সব সময় তুলনামূলক বেশি থাকে। এই অবস্থায় গ্রামের শীতের আবহাওয়া দেখা দিলেও শহরে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগে। এছাড়া বাতাসের যে পরিবর্তন সেটি শুরু হয় উত্তরাঞ্চল হয়েই। এই কারণে ওইসব এলাকায় আগেই শীতের দেখা মেলে।
প্রসঙ্গত, শীতকালে উত্তরদিক (উচ্চ চাপযুক্ত স্থলভাগ) থেকে দক্ষিণদিকে (নিম্নচাপযুক্ত জলভাগের দিকে) বাতাস প্রবাহিত হয়। জানা যায়, শীতকালে হিমালয়ের নিকটবর্তী উত্তরাঞ্চলে উচ্চ চাপ থাকে। সুতরাং এই অঞ্চল থেকে বাতাস দক্ষিণে প্রবাহিত করে যেখানে চাপ কম থাকে। এ কারণেই বাতাসের প্রবাহের দিকটি উত্তর দিক থেকে।