‘বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। যে ব্যাধি করোনাকালে আরও সংক্রমিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ বাল্যবিয়ে বাবার পছন্দে হয়ে থাকে। একটি মেয়ে ১৮ বছরের আগ পর্যন্ত শিশু। ওই শিশু বিয়ের পর নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। সমাজে অনেক সময় এই শিশুকে শারীরিকভাবে আঘাত করা না হলেও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। স্বামীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাকে বাধ্য করা হয় যৌন সম্পর্কে। যা সাধারণত দেখা যায় না। আইনের চোখে ধুলো দিয়ে জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বশীলদের সহযোগিতায় সমাঝোতার মাধ্যমে হয়ে থাকে বাল্যবিয়ে। এ কারণে এত এত বাল্যবিয়ে হচ্ছে। কিন্তু বাল্যবিয়ে আইনে অভিযোগ তেমন হয় না।’
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) ‘উইমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড (ওয়াও) বাংলাদেশ ফেস্টিভাল’র রাজশাহী চ্যাপ্টার সেলিব্রেটিং উইমেন অ্যান্ড গার্লস অনুষ্ঠানে ‘বাল্যবিয়ে রোধ’ প্যানেল ডিসকাশনে এসব কথা বলেন অতিথিরা।
প্যানেল ডিসকাশন পর্বে বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তা হিসেবে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিমা জোহরা, রাজশাহী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আবিদা আনজুম মিতা ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক (লিগ্যাল) অ্যাডভোকেট দিল সেতারা চুনি।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে দেশে আইন আছে। তবে আইন দিয়ে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব না। কেননা সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলো বলে থাকে বাল্যবিয়ে নেই। কিন্তু বিভিন্ন এনজিও সংস্থার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাল্যবিয়ের সমস্যা প্রকট। এছাড়া সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ নানা কারণে এ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন হয় না। এখন বাল্যবিয়ে রোধে সচেতনতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেখানে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষকসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
দিনব্যাপী এ আয়োজনের স্টেজ পারফরম্যান্স শুরু হয় বিকাল ৩টায়। বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে ছাত্রীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাজশাহী কলেজের প্রভাষক নূরজাহান বেগমের সঞ্চালনায় বক্তা ছিলেন রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া, আরএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ইনচার্জ মোহতারামা আশরাফি খানম ও সমাজকর্মী মিফতাহুল জান্নাত। ওয়াও বিটস বক্তা ছিলেন, হিমালয়ের আইল্যান্ড পিক জয় পবর্তারোহী সাইলা বিথি, ওমেন অ্যান্ড চাইল্ড অ্যাসোসিয়েশনের কো ফাউন্ডার ওয়াহিদা খানম, প্রথম আদিবাসী কাউন্সিলর খ্রিস্টিনা সরেন এবং বাংলার জনপদের প্রকাশক ড. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সমাজসেবী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনী। শেষে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।
এর আগে রাজশাহী কলেজ মাঠে উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকশন, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টম মিসোসিয়া।
পাঁচ হাজারের বেশি দর্শক আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য উৎসব উপভোগ করেন। এতে প্যানেল আলোচনা, কর্মশালা, স্পিড মেন্টরিং, বাইটস, মার্কেটপ্লেস ও ঐতিহ্যবাহী আলকাপ, মিউজিক্যাল পাপেট শো ও কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল। এছাড়া কনসার্ট মাতান ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’ তারকা রাজশাহীর মেয়ে মৌমিতা তাশরিন নদী।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় প্রাণবন্ত ও বহুমুখী এ উৎসব আয়োজন করে সেন্টার ফর কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সিসিডি বাংলাদেশ ও মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন।