বান্দরবা‌নে বম পাড়া জনশূ‌ন্য, অন্যদিকে উৎসব
বাংলাদেশ

বান্দরবা‌নে বম পাড়া জনশূ‌ন্য, অন্যদিকে উৎসব

সম্প্রতি বান্দরবানে ব্যাংকে হামলাসহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে নির্মূল পাহাড়ে চলছে যৌথবা‌হিনীর চিরুনি অভিযান। এরই মধ্যে কেএনএফ-এর প্রধান সমন্বয়ক ও উপ‌দেষ্টাসহ ৬২ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অভিযানে ভীত বম সম্প্রদায়ের লোকজন পাড়া ছেড়েছেন। বেশিরভাগ বম পাড়া এখন জনশূন্য। এই অস্থিরতার মধ্যেই পাহাড়ে উদযাপন হচ্ছে সাংগ্রাই উৎসব। একদিকে বম পাড়া জনশূন্য হলেও অন্যদিকে পাহাড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই উৎসব চলছে ধুমধামের সঙ্গেই।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ২ এপ্রিল রাতে এবং ৩ এপ্রিল দুপুরে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব‌্যাংক লুট  এবং ব্যাংক ম‌্যা‌নেজার‌কে অপহর‌ণের ঘটনা ঘটে। এরপরের দিন (৪ এপ্রিল) পার্শ্ববর্তী থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় দি‌নে-দুপু‌রে চাঁদের গাড়িতে ক‌রে এসে প্রকা‌শ্যে হামলা চালায় কেএনএফ-এর শতাধিক অস্ত্রধারী।

এরপর থে‌কে কেএনএফ‌ এর সশস্ত্র বা‌হিনী‌কে নির্মূল কর‌তে চিরুনি অভিযানে না‌মে যৌথবা‌হিনী। অভিযা‌নে গ্রেফতার হয় কেএনএফ-এর প্রধান সমন্বয়ক ও উপ‌দেষ্টাসহ ৬২ জন। তা‌দের‌ গ্রেফতা‌রের পর আদাল‌তে সোপর্দ করা হ‌লে আদাল‌তের আদে‌শে সবাইকে কারাগা‌রে প্রেরণ করা হয়।

কেএনএফ নির্মূল কর‌তে বান্দরবা‌নে মোতা‌য়েন করা হ‌য় সেনা, বি‌জি‌বি, পু‌লিশসহ বিভিন্ন গো‌য়েন্দা বা‌হিনীর বাড়‌তি জনবল। এছাড়া নামানো হয়ে‌ছে সাঁজোয়া বি‌শেষ যান। বর্তমানে পাহা‌ড়ে কেএনএফের অবস্থান জান‌তে ব‌্যবহার করা হ‌চ্ছে ড্রোন। অভিযা‌নের আত‌ঙ্কে বি‌ভিন্ন পাড়ার বম সম্প্রদা‌য়ের প‌রিবারগু‌লো পাড়া ছে‌ড়ে অন‌্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ফ‌লে ইতিম‌ধ্যে বে‌শিরভাগ বম পাড়া‌গুলো‌ জনশূ‌ন্য হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে।

একা‌ধিক বম প‌রিবা‌রের সঙ্গে কথা ব‌লে জানা‌ গে‌ছে, কু‌কি ‌চি‌নের সদস‌্যদের ধর‌তে অভিযানে অনেক নিরীহ মানুষও ধরা পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাই এসব অভিযান থে‌কে বাঁচ‌তে অনেকেই স্বজন‌দের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। এতে বম জনগোষ্ঠীর লোক অধ্যুষিত পাড়াগুলো প্রায় জনশূ‌ন্য হ‌য়ে পড়েছে। ক‌য়েক‌টি বম পাড়া ঘু‌রে এমন চিত্র দেখা গে‌ছে।

ত‌বে পাহা‌ড়ে বাংলা নববর্ষ পালন কিংবা মারমা‌দের সাংগ্রাই উৎস‌বে এর কোনও প্রভাব পড়‌ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কু‌কি ‌চি‌নের সঙ্গে জ‌ড়িত বম সম্প্রদায় লোকেরা খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী। আর সাংগ্রাই পালন কর‌ছেন বুদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের লোকেরা। য‌ার কার‌ণে আলাদা আলাদা পাড়ায় ভিন্ন প‌রি‌বে‌শে বিরাজ কর‌ছে। অভিযা‌ন চল‌ছে বম অধ‌্যু‌ষিত এলাকায়। আর সাংগ্রাই উদযাপন করা হ‌চ্ছে মারমা অধ‌্যু‌ষিত এলাকায়। যার কার‌ণে এর কোনও প্রভাবই পড়‌ছে না সাংগ্রাই উৎস‌বে।

বম পাড়ার একটি চার্চ  (ছবি: প্রতিবেদক)

উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপ‌তি মং মং সিং ব‌লেন, আমা‌দের প্রধান এবং প্রা‌ণের উৎসব সাংগ্রাই। এবার আমরা আগের চে‌য়েও ঝাঁকজমকভা‌বে এ উৎসব‌টি পালন কর‌ছি। মারমা অধ‌্যু‌ষিত এলাকায় কু‌কি‌ চি‌নের কোনও প্রভাব নেই। যার কার‌ণে সাংগ্রাই উৎসব পালন কর‌তে আমা‌দের কোনও অসু‌বিধা হ‌চ্ছে না। আশা কর‌ছি আমরা সুন্দরভা‌বে আমা‌দের সামা‌জিক অনুষ্ঠান‌টি সবার অংশগ্রহ‌ণের মাধ‌্যমে পালন কর‌তে পার‌বো।

এদিকে ঈদের পরদিন থেকে বান্দরবানে কিছু পর্যটক দেখা গেলেও তার পরিমাণ হা‌তে গোনা। হোটেল মোটেলে রুম বাতিল হয়েছে বেশিরভাগ। পর্যটক না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হ‌য়ে‌ছে অনেক ব্যবসায়ী। জেলা সদরের আবাসিক হোটেল হিলভিউ হোটেলের ম্যানেজার পারভেজ জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রচুর পর্যটক বান্দরবানে বুকিং পেয়েছিলাম। কিন্তু কুকি-চিন সন্ত্রাসীদের সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় এবারে হোটেল বুকিং নেই, যারা আসছে তারা ও আশপাশের জেলায় চলে যাচ্ছে।

সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা  (ছবি: প্রতিবেদক)

যদিও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রুমার বগা‌লেক, থান‌চির নাফাখুম ও রোয়াংছ‌ড়ির দেবতাখুমসহ ক‌য়েক‌টি পর্যটন কেন্দ্র ছাড়া বান্দরবান সদরের নীলাচল, মেঘলা, শৈপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড়, নীল‌গি‌রি, লামার মি‌রিঞ্জা, আলীকদ‌মের আলীর সুরঙ্গ, নাইক্ষ‌্যংছ‌ড়ির উপবনসহ সবক‌টি পর্যটন কেন্দ্র র‌য়ে‌ছে নিরাপদ রয়েছে। এসব স্থা‌নে পর্যটকরা অনায়া‌সে ঘু‌রে বেড়া‌তে পার‌বেন বলেও দাবি করছেন তারা।

ট্যুরিস্ট পুলিশের বান্দরবান জোনের ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ জানান, যেকোনও উৎসবের ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়। আর তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকি।  বান্দরবানে দুটি উপজেলায় (থানচি ও রুমা) একটু সমস্যা হলেও সেগুলো বাদ দিয়ে পুরো জেলায় 
অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই স্পটগুলোতে পর্যটকরা অনায়াসে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।’

সাংগ্রাই ঘিরে পাহাড়ে চলছেেউৎসবের আমেজ  (ছবি: প্রতিবেদক)

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, বান্দরবানের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে বড় ধরনের আতঙ্কের কিছুই নেই। দীর্ঘ ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকরা অনায়াসে আসতে পারবেন এবং ভ্রমণ করতে পারবে। রুমা এবং থানচি ছাড়া বান্দরবানের অন্যান্য উপজেলাগুলোতে অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে এবং সেখানে ভ্রমণ করতে আমরা পর্যটকদের উৎসাহিত করছি। 

তি‌নি ব‌লেন, বান্দরবা‌নে মারমা‌দের সাংগ্রাই উৎসব‌টিও সক‌লে উপ‌ভোগ কর‌তে পার‌বেন অনায়া‌সে। এখা‌নে কু‌কি‌ চিন সন্ত্রাসী‌দের কোনও প্রভাব নাই। তারপরও আমরা বাড়‌তি নিরাপত্তার ব‌্যবস্থা রে‌খে‌ছি।

Source link

Related posts

গুলিবিদ্ধ শ্রমিকদের চিকিৎসা-ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি

News Desk

ভয়-আতঙ্কে বান্দরবানের হোটেল-রিসোর্ট ফাঁকা, পর্যটনে ধস

News Desk

টিকা নিবন্ধনকারীর সংখ্যা সাড়ে ৩ কোটি

News Desk

Leave a Comment