আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির শোকের দিন। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ইতিহাসের নৃশংস ও মর্মস্পর্শী এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষ হারায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বীরত্ব, ত্যাগ, দৃঢ়প্রত্যয়, নেতৃত্বগুণ; একজন রাজনীতিক হিসেবে এর সব কটির সম্মিলন জাতি দেখেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে, যা সহজেই তাঁকে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতার মর্যাদায় আসীন করেছে। ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তিনি স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে। আজ শোকের দিনে বাঙালি তাদের মহান নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
শোক দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী পালন করবে তারা। বিশেষ করে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এই উপলক্ষে সকাল ৭টায় পুরো জেলায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সংগঠনের সর্বস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচি শুরু হবে।
সকাল ৭টা ২০ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন। সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। দুপুর ১২টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স চত্বর জামে মসজিদে ১৫ আগস্টে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, দুপুর সাড়ে ১২টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
জাতীয় শোক দিবসে এসব কর্মসূচি আয়োজনের কথা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজম। তিনি বলেন, ‘দিবসটি উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং সমগ্র জেলায় সকাল ৭টায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন। এরপর বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। দুপুরে সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স চত্বর জামে মসজিদে ১৫ আগস্টে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দোয়া মাহফিল শেষে তবারক বিতরণ করা হবে। দিবসটি সফল করতে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সব নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি আমরা। এবার এগুলো থাকছে দিবসের কর্মসূচি। এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও সেই রাতে তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তাঁর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমেদ, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবলীগের নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালিয়ে তাঁকে এবং তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর কন্যা বেবি, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় আবদুল নঈম খানকেও হত্যা করা হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়। এমনকি খুনিদের দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর খুনিদের বিচার শুরু হয়। একইসঙ্গে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ও এই দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। পরে উচ্চ আদালত ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এখন পর্যন্ত ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একজন বিদেশে মারা গেছেন। পাঁচ জন পলাতক।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।