‘এক সপ্তাহ আগেও পুকুর ভরা মাছ, সবজি ক্ষেত ও খামার ভর্তি ব্রয়লার মুরগি ছিল; এখন কিছুই নেই। বন্যার পানিতে আমার সবই শেষ হয়ে গেছে’— শনিবার (১২ আগস্ট) এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর আমিরাবাদ চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. ওসমান। এলাকায় তরুণ উদ্যাক্তা হিসেবে বেশ পরিচিতিও আছে তার। শুধু ওসমান নন, বন্যায় তার মতো অনেকেই মৎস্য ও কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের ১৩টি উপজেলা এবং মহানগরীসহ বন্যায় মাছ চাষের ১৩ হাজার ৩৭৯টি পুকুর এবং ১২৬টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। অবকাঠামোসহ সব মিলিয়ে বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৬৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের জরিপ কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘বন্যায় প্লাবিত চট্টগ্রামের ১৩ হাজার ৩৭৯টি পুকুরের আয়তন ৩ হাজার ৭৪৬ হেক্টর। আর ভেসে যাওয়া ১২৬টি মাছের ঘেরের আয়তন ১৮৯ হেক্টর। এসব পুকুর ও ঘের থেকে মাছ ভেসে গেছে ৪ হাজার ১৫৪ টন। সেই হিসাবে এই বন্যায় শুধু মৎস্য খাতেই ৬৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
শুধু মাছ নয়, অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিভিন্ন কৃষি প্রকল্পেও। ক্ষতিগ্রস্ত তরুণ মো. ওসমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আমার বয়লার মুরগির খামার ডুবে মারা গেছে ১ হাজার মুরগি। পুকুর ভর্তি মাছ ছিল। প্রায় চার লাখ টাকার বেশি মাছ বন্যার পানিতে চলে গেছে। আমার বেশ কিছু সবজি ক্ষেতও ছিল। সেগুলো একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যায় আমাকে একেবারেই পথে বসিয়ে দিয়েছে।’
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের জরিপ কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ বন্যায় জেলার ১৫ উপজেলার মধ্যে সীতাকুণ্ড এবং ফটিকছড়ি উপজেলায় মৎস্যখাতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জেলার বাকি সব উপজেলা এবং মহানগরীতে মৎস্য চাষে অনেক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় অনেক পুকুর ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলায়।’
চন্দনাইশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান আহসানুল কবির বলেন, ‘এ উপজেলায় বন্যায় ২ হাজার ৫৩৭টি পুকারের মাছ ভেসে গেছে। এরমধ্যে ১০ লাখ মাছের পোনাও আছে। অবকাঠামোসহ প্রাথমিকভাবে এ উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতি ২ কোটি টাকা। তবে এ ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।’
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা সুজাত কুমার চৌধুরী বলেন, ‘বন্যায় পটিয়া উপজেলায় ৪ হাজার পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়েছে।’
টানা বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ধসে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি। জেলা প্রশাসন কার্যালয় দুদিন আগেই প্রায় ১৩৫ কোটি টাকার তথ্য জানিয়েছে। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ১ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ৪ আগস্ট নগরী ও জেলায় বন্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে। এরমধ্যে ৭ আগস্ট পর্যন্ত চার দিন টানা জলাবদ্ধতা ছিল নগরীতে। অপরদিকে জেলার ১৫ উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলায় এখনও কিছু কিছু এলাকায় বন্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।