‘ফোন করে বাবাকে বাসায় আসতে বললাম, তিনি আসলেন কিন্তু লাশ হয়ে’
বাংলাদেশ

‘ফোন করে বাবাকে বাসায় আসতে বললাম, তিনি আসলেন কিন্তু লাশ হয়ে’

ছেলে ও মেয়েকে বিসিএস ক্যাডার বানানোর স্বপ্ন ছিল। দুজনকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিজের ছোট্ট ব্যবসা মুরগির দোকান করে ওদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল আমার স্বামী। কিন্তু সেই স্বামীকে গুলি করে কেন হত্যা করা হলো?’

এভাবেই প্রশ্ন রেখে সাংবাদিকদের কাছে কথাগুলো বলছিলেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পূর্ব রতনদিয়া গ্রামের মো. কোরবান শেখের (৪৯) স্ত্রী শিল্পী আক্তার।

তিনি বলেন, ‘১৭-১৮ বছর যাবৎ আমার স্বামী ঢাকার সাভারে মুরগির ব্যবসা করতো। গত শনিবার (২০ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন ও কারফিউর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। ওই দিন রাত ১১টার দিকে কালুখালী উপজেলার বাগমারা গ্রামে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।’

সেই থেকে নিহত কোরবানের বাড়িতে মাতম চলছে। স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্ত্রী, অশ্রু ঝরছে অঝোরে। পাশেই বসে আছেন তার ছেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রমজান শেখ ও মেয়ে সাভার ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মিতু আক্তার মিতা (২০)।

কোরবান শেখের ছেলে রমজান শেখ বলেন, ‘গত ২০ জুলাই সকালে কারফিউর মধ্যেই অনেক দোকানিরা দোকান খোলেন। আব্বুও সকাল ৯টার দিকে দোকান খোলেন। আমাদের বাসা থেকে আব্বুর দোকানে হেঁটে যেতে ৫ থেকে ৭ মিনিটের দূরত্ব। দুপুর ১টার দিকে গোলাগুলির শব্দ শুনে আমার বোন আব্বুকে ফোন করে বাসায় চলে আসতে বলে। দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে বাজারের দোকানি আমার এক চাচা ফোন করে আমাকে জানান যে, আমার আব্বুর গুলি লেগেছে। আমি দৌড়ে বাজারে গিয়ে দেখি আমার চাচাসহ কয়েকজন দোকানি আমার আব্বুকে কোলে করে নিয়ে আসছেন। আমরা দ্রুত তাকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আব্বুকে ভর্তি করেনি। পরে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্বুকে মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরে আমি জানতে পারি দুপুরে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ শুনে আব্বু দোকান বন্ধ করে হেঁটে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। সামনে সংঘর্ষ হতে দেখে আব্বুসহ কয়েকজন দোকানি মাছ বাজারে বরফকলের গেট আটকে ভেতরে আশ্রয় নেন। দুর্বৃত্তরা বরফকলের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে আব্বুসহ সকলেই আহত হন। আব্বুর বুকে ও পায়ে দুটি বুলেট বিদ্ধ হয়। এ ছাড়া বুকে ও মুখে অসংখ্য ছররা গুলি লাগে। পরে আমার আব্বু মারা যান। ওই দিনই রাত ৯টার দিকে আব্বুর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে রাত ১১টার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।’

নিহত কোরবান শেখের মেয়ে মিতু আক্তার মিতা বলেন, ‘গুলির শব্দ শুনে দুপুরের দিকে মায়ের কথায় বাবাকে ফোন করে বাসায় আসতে বলি। বাবা আসলো ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে। আমি তো চাইনি আমার বাবা লাশ হয়ে ফিরে আসুক। বাবা ছাড়া এখন আমরা কীভাবে বাঁচবো? আমাদের বেঁচে থাকার দায়িত্বটা কেইবা নেবে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীর বিচার চাই।’

স্ত্রী শিল্পী আক্তার বলেন, ‘আমার প্রতিবন্ধী স্বামীকে যারা গুলি করে হত্যা করলো আমি সেই খুনিদের বিচার চাই। আমার ছেলে-মেয়ে বাবাহারা হলো। হাতজোড় করে বলেও তিনি রক্ষা পাননি। সরকারের কাছে আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীর বিচার চাই। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের গ্যারান্টি চাই ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে চাই।’

Source link

Related posts

চিলমারী নৌবন্দর ‌ছে‌ড়ে গে‌লো পণ্যবাহী প্রথম নৌযান

News Desk

দেশে ফিরলেন আরও ৪৪ জন, করোনায় শনাক্ত ১

News Desk

কুমিল্লায় ২ হাসপাতাল সিলগালা, সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা

News Desk

Leave a Comment