প্রকৃত দোষীদের বিচার চান বনখড়িয়া গ্রামবাসী  
বাংলাদেশ

প্রকৃত দোষীদের বিচার চান বনখড়িয়া গ্রামবাসী  

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া (চিলাই ব্রিজ) এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার তৃতীয় দিনেও রেললাইন সংস্কার কাজ করছেন রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীরা। ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসছেন। তারা কথা বলছেন স্থানীয়দের সঙ্গে। চেষ্টা করছেন প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করতে। স্থানীয়রা বলছেন, ঘটনাটি খুবই আতঙ্কের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা তদন্তকারী কর্মকর্তারা গ্রামের কাউকেই হয়রানি করছেন না। স্থানীয়রা বাড়িতে থেকে নিয়মিত দৈনন্দিন কাজ করে যাচ্ছেন। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসব চিত্র দেখা যায়।

বনখড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দাঁড়িয়ে গায়ে রোদ লাগাচ্ছিলেন কৃষক আবুল হোসেন ও আকতার হোসেন। বুধবার ভোরে চিলাই ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয়ে ক্ষেপে যান। তারা বলেন, ‘আমরা আমাদের বাড়িতেই অবস্থান করছি। অথচ আপনারা (সাংবাদিকেরা) লিখেছেন বনখড়িয়া গ্রাম পুরুষশূন্য।’ তবে এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান ওই দুই কৃষক।

ঘটনাস্থলের পাশেই নিচু জমিতে (ধানক্ষেত) ধান কাটছিলেন কৃষক মহির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়িতে বসবাস করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা কেউ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের কোনও সমস্যা করছে না। এত বড় ঘটনায় আমরা ভয় পেয়েছি। ঘটনা দেখার পর থকে মনে হলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। যদি ট্রেনটি চিলাই ব্রিজের ওপর উঠে যেতো তাহলে অনেক যাত্রী মারা যেতো। ঘটনার পর থেকে ২৪ ঘণ্টা পুলিশের নিরাপত্তা রয়েছে এ গ্রামে।’

ওই গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি করেন। শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকায় তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘আমরা পরিবারের সবাই চাকরি করি। ঘটনার দিন আমরা কর্মস্থলে যাওয়ার পর শুনতে পাই চিলাই ব্রিজের কাছে ট্রেন পড়ে গেছে। এ ছাড়া আমরা আর কিছু জানি না।’

বনখড়িয়া জামে সজিদের ইমাম নাজমুল আলম বলেন, ‘যারা অপরাধী তাদের সমস্যা। আমাদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। মুসল্লিরা নিয়মিত মসজিদে আসছেন। এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষক ও খেটে খাওয়া শ্রমিক। তারা এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা না। অন্য কোনও এলাকা থেকে দুষ্কৃতকারীরা এখানে এসে ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।’

স্থানীয়রা এলাকাতেই অবস্থান করছেন বলে জানান ওই এলাকায় বাড়িতে ধান শুকাচ্ছিলেন গৃহিনী নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এখনও আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ ঘটনাস্থলে দেখতে আসে। এ ঘটনাটি যারা করেছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে কঠিন বিচারের আওতায় আনা হোক। কোনও নিরপরাধ মায়ের সন্তান যেন বিনা অপরাধে হয়রানির শিকার না হয়। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই। এমন বিচার করা হোক যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না করে।’

ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বহিনীর সদস্য সিপাহী দেলোয়ার হোসেন জানান, তারা ৮ সদস্যের একটি টিম ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন। কোনও রকম তাঁবু ছাড়া রেললাইনের পাশের নিচু ঝোপঝাড়ে (জঙ্গলে) কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে এবং কেউ হাঁটাহাঁটি করে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের কর্মী (রেঞ্জ-৩) ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমাদের রেল বিভাগ থেকে ৪ জন এবং মাস্টার রোলের ৯ জনসহ মোট ১৩ জন রেললাইন সংস্কারে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।’

মামলার বাদী বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী অশ্রাফুল আলম খান জানান, এ ঘটনায় ওই ট্রেনের যাত্রী ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আসলাম (৩৫) ঘটনাস্থলে নিহত হন। ট্রেনের এলএম এমদাদুল হক, সহকারী এলএম সবুজ মিয়া, গার্ড বায়েজিদ ভূঁইয়াসহ ১০ জন আহত হন।’

বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসছেন দুর্ঘটনাস্থলে আসা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়নি।’

দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের (ঢাকা অঞ্চল) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মাজহারুল হক। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ করছি। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সম্মিলিতভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে। কোনও নিরীহ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকটাও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’

Source link

Related posts

ইতালিতে প্রথম চিকিৎসকদের সাহায্যে স্বেচ্ছামৃত্যু

News Desk

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফেরিতে বাস পারাপার

News Desk

নদীতে ভেসে আসা লাশের পরিচয় মিলেছে

News Desk

Leave a Comment