সিরাজগঞ্জে পুলিশের মাইক্রোবাসে ডাকাতির ঘটনায় ছয় ডাকাতকে গ্রেপ্তারসহ লুট হওয়া মালামাল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বগুড়া জেলার সোনাতলা থানা পুলিশের ভাড়াকৃত মাইক্রোবাসে ডাকাতির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডাকাতির সাথে জড়িত ৬ ডাকাতকে গ্রেপ্তার, লুণ্ঠিত মালামাল, ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু এবং ৪ চাপাতি উদ্ধার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতরা হলো- সদর উপজেলা রায়পুর গ্রামের লতিফ খানের ছেলে তুষার আহম্মেদ @ ইউসুফ খাঁন @ অন্তর (২২), ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার মৃত নুরু মিয়ার ছেলে ওয়াজেদ আলী (৩৪), সদর উপজেলার মালশাপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে আব্দুল লতিফ খান @ নিকি (২১), কাবু কশাই এর ছেলে ইনামুল হক আশিক (১৯), মৃত কিচমতের ছেলে আব্দুল মোতালেব(২৬), চর শিয়ালকোল গ্রামের মৃত ফটিক শেখের ছেলে মোঃ সোহেল রানা(২৮)।
এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মালামালগুলো হলো- হ্যান্ডকাফ-১ জোড়া, মোবাইল-৩ টি, মানিব্যাগ-১টি, ওয়াকিটকি-১টি, পুলিশ ইউনিফর্ম-১ সেট, ক্রেডিট কার্ড-১টি, পুলিশ আইডি কার্ড- ১টি, মানিব্যাগ- ১টি, নগদ-৬২০০ টাকা, কালো ব্যাগ-০২টি ও
ডাকাতিতে ব্যবহৃত ৪টি অস্ত্র।
রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হল রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সিরাজগঞ্জ জেলাধীন ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কস্থ নলকা হতে সয়দাবাদ মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়মিত ডাকাতি করা তাদের পেশা। তাদের নিয়মিত ডাকাতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিগত ১২ই অক্টোবর গ্যাংলিডার তুষারের নেতৃত্বে ৬ জনের একটি ডাকাতদল এবং ডাকাত সরদার ছোট (ছদ্মনাম) এর নেতৃত্বে ৬-৭ জনের অপর একটি দল কড্ডা এবং মুলিবাড়ির মাঝামাঝি জায়গায় পৃথকভাবে অবস্থান নেয়। রাত ১টার দিকে বগুড়া জেলা পুলিশ কর্তৃক ঢাকা হতে অপহরণ মামলার ভিকটিমকে উদ্ধার করে বগুড়া ফেরার পথে। ভাড়াকৃত হায়েস মাইক্রোবাস ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ডাকাতদল অবিরাম পাথর নিক্ষেপ করে। মাইক্রোবাসের ডানপাশ থেকে পিছন দিকের কাঁচ ভেঙে ফেলে। ওই ভাঙা কাঁচ মাইক্রোবাসের যাত্রী ভিকটিম রিশার বড় চাচা মোঃ শহিদুল ইসলাম এর মাথায় পড়লে তিনি আঘাত প্রাপ্ত হন। আকস্মিক এই ঘটনায় শহিদুল ইসলাম চিৎকার করলে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে আহত শহিদুল ইসলামের রক্তপাত বন্ধ করতে মাথায় গামছা বেঁধে দেয়ার এক পর্যায়ে সশস্ত্র ডাকাত দল গাড়ির পিছন দিক থেকে এসে যাত্রীদের অতর্কিত হামলা করে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, পুলিশ ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ এবং ভিকটিমের কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাসে ড্রাইভারসহ মোট ৬ জন ছিলেন। এর মধ্যে ভিকটিম উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণকারী বগুড়া জেলায় সোনাতলা থানার এসআই আব্দুল খালেক এবং কনস্টেবল আবুল কালাম ছাড়াও অপহরণ মামলার ভিকটিম মোছাঃ রুদমিলা আক্তার রিশা (১৩), রিশার বাবা মো. আঃ রশিদ এবং বড় চাচা মোঃ শহিদুল ইসলাম ছিলেন।
দুধর্ষ এই ডাকাতদল এর অতর্কিত হামলায় দুইজন পুলিশ সদস্য, ভিকটিম রিশার বাবা এবং চাচা দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে জখমপ্রাপ্ত হন।
এসআই আব্দুল খালেকের হ্যান্ড ট্রাভেল ব্যাগে রক্ষিত পুলিশ ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি সেট এবং হ্যান্ডকাফ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল কাগজ পত্রসহ ব্যাগটি নিয়ে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। দুর্ধর্ষ এই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত গ্যাং লিডার তুষারসহ জড়িত সকল ডাকাতকে কোনাবাড়ী গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি লুণ্ঠনকৃত মালামাল ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রাদি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পুলিশ সুপার আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সার্বিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আদালত।