পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিললো ২৯ বস্তা টাকা, গুনতে পার হবে দিন
বাংলাদেশ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিললো ২৯ বস্তা টাকা, গুনতে পার হবে দিন

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের ১১টি সিন্দুক খুলে এবার পাওয়া গেছে ২৯ বস্তা টাকা। দেশি টাকার পাশাপাশি সেখানে ছিল স্বর্ণালঙ্কারসহ বিদেশি মুদ্রাও। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সিন্দুক খুলে টাকাগুলো বস্তায় ভরা হয়। জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তায় সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছে।

গত ১৭ আগস্ট আরেকবার খোলা হয়েছিল সিন্দুকগুলো। সে হিসাবে এবার তিন মাস ১৪ দিন পর খোলা হলো মসজিদের সিন্দুক। তখন সেগুলোতে সাত কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া যায়। এর আগে গত ২০ এপ্রিল সিন্দুক খুলে পাওয়া গিয়েছিল সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। তারও আগে গত বছরের  ৯ ডিসেম্বর পাওয়া যায় ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা।

সিন্দুক খোলার সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সেনা, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। টাকা গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত মসজিদ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিজা‌বে রহমতের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করছেন। তাছাড়া দুটি মাদ্রাসার প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৭০ জন কর্মী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় ৪৫০ লোক টাকা গণনার কাজ করছেন। 

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম জানান, টাকাগুলো গুনতে সারাদিন লেগে যেতে পারে। হয়তো সন্ধ্যা বা তার পর জানা যাবে টাকার পরিমাণ।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। ২০২৪ সালে আজ নিয়ে তিনবার খোলা হলো সিন্দুক। আগের দুবারে পাওয়া যায় ১৪ কোটি ১১লাখ ১৮ হাজার ৯৬০ টাকা।

স্থানীয়রা জানান, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে। দান করেন মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার সঙ্গে সোনা-রূপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করেন লোকজন।

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিললো ২৯ বস্তা টাকা, গুনতে পার হবে দিন

তবে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে প্রাপ্তির আনন্দ, না-পাওয়ার বিরহ বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করেন।

সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিন্দুকের টাকা-পয়সা বস্তাবন্দি করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরা।  এর পরে বস্তাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমাণ গণনাকারীদের সামনে ঢেলে দেওয়া হয় টাকাগুলো। এভাবেই শুরু হয় গণনার কাজ।

জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে থাকে মসজিদ কমিটি। যে কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক।

মসজিদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌ‌জিয়া খান জানান, দানের টাকায় মসজিদের নিয়মিত খরচ চালিয়ে ব্যাংকে জমানো হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। মসজিদ ঘিরে এখানে ছয়তলাবিশিষ্ট একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে ৫০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন। এর মধ্যে পাঁচ হাজার নারীর জন্য আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরও বিভিন্ন আয়োজন। এ জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। 

Source link

Related posts

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচন করবে না: সেলিমা রহমান

News Desk

ফেরি চলাচল ব্যাহত, ৫ কিমি গাড়ির সারি

News Desk

ভুট্টাক্ষেতে উদ্ধার হওয়া নবজাতককের ঠাঁই হল শিশু সদনে

News Desk

Leave a Comment