ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুর বিসিক শিল্পনগরীতে ডেকো ফুডস নামে একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরির পরিত্যক্ত পণ্য ক্রয় নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়ন ও বুধল ইউনিয়নের বিএনপির দুই নেতা ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নন্দনপুর বিসিক শিল্প নগরীতে অবস্থিত ডেকো ফুডস কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি বিস্কুট তৈরির কারখানা থেকে দুই থেকে তিন মাস অন্তর-অন্তর কারখানার পরিত্যক্ত পণ্য নিলামে বিক্রি করা হয়। এসব পরিত্যক্ত পণ্য মাছের খাদ্য হিসেবে বিক্রি হয়। গত একদশক ধরে এসব পণ্য কিনতেন সুহিলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিনের পক্ষের ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম এবং কৃষকদল নেতা মোরশেদ হাজারী। অপরদিকে ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর এই পণ্যগুলো কেনার জন্য পাশের বুধল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের সমর্থক আশরাফুল ইসলাম মাসুম পণ্য কেনার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আসেন।
পরে মঙ্গলবার সকালে আগের ব্যক্তিদের কাছে পণ্য বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এমন খবর পেয়ে সেখানে দলবল নিয়ে ছুটে যান আশরাফুল ইসলাম মাসুম। পরে কারখানার পণ্য কিনে নিয়ে সেখানে গিয়ে তিনি নাসির উদ্দিনের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। পরে এ নিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন দুই দলে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হামলার ঘটনার উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন।
এ সময় ডেকো ফুডস নামের বিস্কুট ফ্যাক্টরিসহ বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি খড়ের গাদা। এ ঘটনার জন্য একপক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করেন।
ঘটনা সম্পর্কে সুহিলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিনের পক্ষের মোরশেদ হাজারী দাবি করেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কারখানার রেট অনুযায়ী কাজটি পায় মেসার্স মোরশেদ অ্যান্ড নাসির খন্দকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটি পাওয়ার পর বুধল ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ তার সমর্থক আশরাফুল ইসলাম মাসুমসহ বেশ কয়েকজন তাদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
তার দাবি, চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় হঠাৎ করে মঙ্গলবার সকালে ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেন হারুন অর রশিদের লোকজন। এতে তাদের পক্ষের বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। এ সময় বেশ কয়েটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
অপরদিকে বুধল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের পক্ষের আশরাফুল ইসলাম মাসুম দাবি করেন, আমি ইতিপূর্বে একসময় ওই কারখানায় চাকরি করতাম। সেই সুবাদে কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকে নিয়ে পরিত্যক্ত পণ্যগুলো কেনার অফার দেয়। আমিও তাদের কথামতো পণ্যগুলো কেনার জন্য কথা বলে আসি। এরপর মঙ্গলবার সকালে জানতে পারি, সেগুলো পূর্বে যারা কিনতেন, তাদের কাছেই কারখানা কর্তৃপক্ষ গোপনে বিক্রি করছেন। এমন খবর পেয়ে আমার কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যাই। তবে সেখানে যাওয়া মাত্রই আগে থেকে ওতপেতে থাকা সুহিলপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন ও তার পক্ষের মোর্শেদ হাজারি দলবল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমিসহ আমার সঙ্গে থাকে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
তার দাবি, তারা আমাদেরকে রক্তাক্তভাবে আহত করেন। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীকে ঝগড়ায় নামার আহ্বান জানান। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
সুহিলপুর ইউনিয়ন তাঁতি দলের সভাপতি মফিজ মিয়া জানান, বিস্কুট ফ্যাক্টরির পরিত্যক্ত পণ্য নিয়ে দুই ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দলের জন্য অনেকটাই বদনাম হয়েছে। তিনি জেলাসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এদেরকে না থামানো গেলে দলের আরও বদনাম হবে।
এ ঘটনায় বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ঘটনার পর পরই তিনি পুলিশকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ সেনাবাহিনী র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও ডেকো ফুডস ফ্যাক্টরির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ঘটনা সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মোজাফ্ফর হোসেন জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী সদস্য ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে পাঁচ জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনও থানায় কোনও মামলা হয়নি।