পদ্মার চরে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
বাংলাদেশ

পদ্মার চরে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি নেমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে চর। নদীর বুকে জেগে ওঠা চর পলিমাটি মিশ্রিত উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন, ধান, গম, ভুট্টা, মসুর, মটরশুঁটি, রসুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো ও শিমসহ নানা ধরনের শাকসবজি। অনেকে আবার রোপণ করেছেন ধান। এতে বেড়েছে কর্মসংস্থান। এসব ফসল ঘরে উঠলে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

পবা উপজেলার মধ্যচরের চাষি আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘নদীতে চর পড়ায় ফসলের আবাদ শুরু করেছি। চরের আশপাশের সব কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। নদীর পানি নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালোমেশিন বসিয়ে পানি তুলে বীজ রোপণ করতে হয়। কয়েকদিনের মধ্যে পুরো চর সবুজ ফসলে ভরে উঠবে।’  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে উৎপাদন করা পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার পর অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যায়। ভারত থেকে আমদানি করে মেটাতে হয় চাহিদা। তারপরও দাম বাজারে থাকে বেশি। আমদানি করতে গিয়ে ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। তাই দেশে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী কৃষি বিভাগ। এবার জেলায় অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে বীজতলা তৈরির কাজ। চলতি মাস থেকে বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করছেন চাষিরা। আগামী জানুয়ারিতে বাজারে পাওয়া যাবে এই পেঁয়াজ।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে ৫৩৮ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ চাষে তিন হাজার কৃষককে দেওয়া হয়েছে প্রণোদনা। এর মধ্যে পেঁয়াজের বীজ, সার, বীজতলা করার পলিথিন, সুতলি ও রশিসহ অন্যান্য উপকরণ চাষিদের বিনামূল্যে দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে তিন লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৮ হাজার ৫৬৩  হেক্টর জমিতে তিন লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছিল। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় দুই লাখ ৬৫ হাজার টন উদ্বৃত্ত পেঁয়াজ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

চারঘাট উপজেলার শিবপুর এলাকায় জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করছেন মো. পিয়াস নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। পেঁয়াজ রোপণ করে দিনে ৩০০ টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি পরিবারে সহায়তা করি।’

শিবপুর গ্রামের কৃষক মো. রাসেল মিয়া বলেন, ‘গত বছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় এবার তিন বিঘাতে রোপণ করছি। তবে শ্রমিক ঠিকমতো না পাওয়ায় রোপণ করতে সময় বেশি লাগছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে রোপণ শেষ করতে পারবো।’

চরে কম খরচে উৎপাদন ভালো হয় উল্লেখ করে বাঘা উপজেলার খায়েরহাট এলাকার কৃষক আবদুস সালাম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে পদ্মার পানি আগে নেমে যাওয়ায় আগাম পেঁয়াজ-রসুন চাষ করছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ে ফসল এলে বাজারে দাম ভালো পাবো। এবার চরের তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ-রসুন চাষ করেছি।’

পদ্মার চরে ফলন ভালো হয় জানিয়ে বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর চরের গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এবার পদ্মার পানি আগে নেমে যাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে আগাম পেঁয়াজ চাষ করেছি। গত বছর তিন বিঘা জমিতে চাষ করে ভালো দাম পেয়েছিলেন। এবারও একই পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করছি।’

আগের তুলনায় পদ্মার চরে ফসলের আবাদ বেড়েছে বলে জানালেন বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান। তিনি বলেন, ‘এ বছর উপজেলার সর্বত্রই কমবেশি পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। সমতল এলাকার চেয়ে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে পদ্মার চরে। আমরা চাষিদের সবসময় পরামর্শ দিচ্ছি।’

চরের আশপাশের সব কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী জেলার পদ্মার চরে চার হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে এবার বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। চরের ৯২৫ হেক্টর জমিতে মসুরডাল, ৩৫০ হেক্টরে সরিষা, ৫৫০ হেক্টরে সবজি জাতীয় ফসল এবং ৫২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এছাড়া ৩৭৫ হেক্টরে গম, ৭২৭ হেক্টরে মসলা জাতীয় ফসল, ৫০০ হেক্টরে বোরো ধান এবং ৩৭৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ‘আগে পদ্মার চরে হাতেগোনা কয়েকটি ফসল ফলতো। এখন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সময়ের পালা বদলে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে পদ্মার জেগে ওঠা চরে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভও বেশি হচ্ছে কৃষকদের।’

Source link

Related posts

‘হামার চ‌রের মানুষ ভোটটা গুরুত্ব কম দেয়’

News Desk

ধীরে নামছে বন্যার পানি

News Desk

চট্টগ্রামে একদিনে করোনায় দুইজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৫৮

News Desk

Leave a Comment