নীলফামারীতে ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চরম দুর্ভোগের শিকার খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষজন। যান চলাচল ও দৈনন্দিন কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর মানুষ একটা গরম কাপড়ের জন্য তাকিয়ে আছে এনজিও বা সরকারি সংস্থার দিকে। সব মিলিয়ে জবুথবু হয়ে পড়েছে নীলফামারী সদরসহ উত্তরাঞ্চল।
সূত্র জানায়, গত ৭ জানুয়ারি থেকে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত টানা সাত দিন এই অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেখা নেই সূর্যের। সেই সঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ ও গতিবেগ ছিল উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ৩-৪ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শনিবার এই পরিস্থিতি আরও তলানিতে নেমেছে। কুয়াশা ও বাতাসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গড় তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯ ডিগ্রিতে। ফলে কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেশি যে দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় রেলপথ ও সড়ক পথে অল্প যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় রাস্তাঘাট, হাটবাজার, রেলস্টেশন বাস টার্মিনালসহ পাবলিক প্লেসে লোকজনের উপস্থিতি নাই বললেই চলে। সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরিজীবীরা আসলেও কাজকর্মে চলছে স্থবিরতা।
জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষরা বের হলেও কাজ না পেয়ে পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, কৃষিশ্রমিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কাজ ছেড়ে হাত গুটিয়ে মানুষ ছুটছে আগুনের তাপ (আঁচ) পেতে।
জেলা শহরের বাজার ট্রাফিক মোড়ে রিকশা নিয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডায় যাত্রী পাই নাই। শহর ফাঁকা, লোকজন নাই। রিকশার জমার টাকা কামাই হয় নাই। পরিবারে ছয় জন খানেওয়াল প্রতিদিন ৩০০ টাকার বাজার লাগে। এই ঠান্ডা বাতাস কাল (বিপদ) হয়ে দাঁড়াইছে। এভাবে জীবন চলে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামর্থ্যবানরা শীত থেকে বাঁচতে পারলেও হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের অবস্থা খুবই করুণ। তারা না পারছে শীত নিবারণ করতে, না পারছে খাবার সংগ্রহ করতে। ফলে দুর্বিষহ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। তাদের দাবি, দ্রুত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হউক।’
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, গত রবিবার (৭ জানুয়ারি) রাত থেকে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আরও ২-৩ দিন এই অবস্থা বিরাজ করতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রাসেল দিও বলেন, ‘এ যাবৎ জেলার ছয় উপজেলায় (ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও সদর) তিন দফায় ৩৬ হাজার ৮৮০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও শীতার্ত মানুষদের কথা চিন্তা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশ করি, দ্রুত শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে। তা পেলেই শিগগির বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।’