ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুন্সেফপাড়ায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবন থেকে ইট পড়ে স্থানীয় কিন্ডার গার্টেনের এক শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকসহ তিন জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আহতরা হলেন– শহরের শেরপুর এলাকার সারোয়ার হাসানের স্ত্রী নাজিয়া করিম (৩৫) এবং তাদের মেয়ে আয়েশা আঞ্জুম (৭), মুন্সেফপাড়ার বিপ্লবের স্ত্রী নয়নতারা (৩২)।

ঘটনার পর আহতদের দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল এবং প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

আহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সন্তানকে নিয়ে শহরের মুন্সেফপাড়া ক্রিসেন্ট কিন্ডার গার্টেনে আসেন নাজিয়া করিম। বিদ্যালয় ছুটির পর দুপুর ১২টায় সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় বিদ্যালয় ঘেঁষা নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের ওপর থেকে একটি ইট ওই কিন্ডার গার্টেনের মাঠের একপাশে ছিটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়েশা আনঞ্জুম ও তার মা এবং নয়নতারা নামে অপর অভিভাবক আহত হন। আহত অবস্থায় তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে নাজিয়ার হাত ভেঙে গেছে, নয়নতারার মাথায় ছয়টি সেলাই দিতে হয়েছে। শিশুশিক্ষার্থী আয়েশাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

নাজিয়ার স্বামী সারেয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর হাত ভেঙে গেছে। মেয়ে পিঠে আঘাত পেয়েছে। আমি এসে ভবনের সংশ্লিষ্ট কাউকে খুঁজে পাইনি। পরে তাদের ব্যানারে থাকা নম্বরে কল দিই। প্রথমে কেউ কল ধরেনি, পরে আরেকটি নম্বরে কল দিলে একজন ফোন ধরে আমাকে হুমকি দেন।’ তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়ে কাজ করেনি। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’

আছমা নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘স্কুলে যাতায়াতে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। স্কুলের পাশে বহুতল ভবন নির্মাণে উচিত ছিল শক্ত ও মজবুত নিরাপত্তাবেষ্টনি তৈরি করা। আজ যাদের উপরে ইট পড়েছে তারা ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন। আমরা চাই এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

ক্রিসেন্ট কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষক কিরণ রায় বলেন, ‘আজ  হঠাৎ করে একটা শব্দ শুনতে পেয়ে আমরা বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে দেখি কয়েকজন অভিভাবক ইট পড়ে আহত হয়েছেন। পরে তাদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। বহুতল ভবনটি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি বলার পরও তারা কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। গতকালও তাদের বলা হয়েছে, তারা যেন নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়ে কাজ করেন। তারপরেও তারা কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’

সদর থানার ওসি বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। সেখানে আহতের খোঁজখবর নিই। যারা আহত হয়েছেন তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-অভিভাবক। ঝুঁকি থাকা অবস্থায় ভবন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছিল। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে ঘটনার পর থেকে আট তলা বিশিষ্ট নির্মাণাধীন নিলয়পার্ক ভিউ নামক ভবনটির নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হেভেন ওয়ার্ড প্রপার্টিজ লিমিটেডের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা গা-ঢাকা দিয়েছে।

Source link

Related posts

২ বছর পর উৎসবে মেতেছে পাহাড়িরা

News Desk

ভারতফেরত তরুণীদের জন্য যশোরে পৃথক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার

News Desk

ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেলো যুবকের

News Desk

Leave a Comment