শহরের অলিগলি ছাপিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে একারাই নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থী। নিজেরাই পোস্টার লাগাচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন, এমনকি মাইকিংও করছেন। প্রচারণার সময় তাদের সঙ্গে কোনও সমর্থক বা কর্মীকে দেখা যাচ্ছে না।
ভোট প্রার্থনা করে তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, নির্বাচিত হতে পারলে মেহনতি মানুষ, কৃষক, শ্রমিক ও জনগণের উন্নয়ন করবেন।
বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনে এই প্রার্থীদের নাম জাসদের (মশাল) মনোনীত শেখ নুরুজ্জামান মাসুম। তিনি খুলনা দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা গ্রামের তাজউদ্দিন শেখের ছেলে এবং তৃণমূল বিএনপির ম্যানুয়েল সরকার, তার প্রতীক সোনালী আঁশ। তিনি মোংলা উপজেলার দক্ষিণ কাইনমারী গ্রামের অসীম সরকারের ছেলে।
সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মোংলা উপজেলার চাপড়া এলাকায় ব্যাটারিচালিত একটি ইজিবাইকে করে জাসদের মনোনীত শেখ নুরুজ্জামান মাসুম নিজের পক্ষে ভোট চেয়ে মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফাঁকে ফাঁকে তার নির্বাচনি গান বাজাচ্ছেন। নির্বাচনি গান বাজিয়ে তার ইজিবাইক ছুটে যায় এ সংসদীয় আসনের আরেক উপজেলা রামপালে।
এ সময় কথা হলে এই প্রার্থী জানান, নিজের প্রচারণা নিজে চালিয়ে ভোট চাওয়ায় জনগণের মধ্যে অন্য রকম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি তিনি ভালোভাবে দেখছেন। এ ছাড়া যাদের তিনি তার পোস্টার লাগাতে দেন, তারা ঠিকমতো পোস্টার না লাগিয়ে ঘুরে এসে টাকা চান। এ জন্য নিজের কাজ নিজেই করছেন।
জয়ের ব্যাপারে এই প্রার্থী বলেন, জনগণ যদি সঠিকভাবে ভোট দিতে পারে, তাহলে ৭ জানুয়ারি দেখবেন আমার পক্ষে কী ফলাফল হয়।
শেখ নুরুজ্জামান মাসুম ১৯৯৬ সালে খুলনা-১ (দাকোপ বটিয়াঘাটা) জাসদ থেকে নির্বাচন করে ব্যাপক ভোটে পরাজিত হয়েছেন। এবারই প্রথম বাগেরহাট-৩ থেকে একই দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে নিজের প্রচারণা নিজে চালিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন দাবি করে অপর প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির ম্যানুয়েল সরকার জানান, বিষয়টি খুবই সন্তোষজনক। ভোটররা তাকে দেখামাত্রই কাছে এসে বুকে জড়িয়ে ধরছেন।
তিনি বলেন, তার এই এলাকায় রিজার্ভ ভোট আছে, সুষ্ঠু ভোট হলে আমিই পাস করবো। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীক নিয়ে যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, সেও আওয়ামী লীগের। এ জন্য তাদের দুজনের ভোট ভাগ হয়ে গেলে বিএনপি-জামায়াতের শতভাগ ভোট আমি পাবো বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, একা একা প্রচারণা চালানোর অনেক সুবিধা আছে। সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে। তাদের মনের কথা শুনতে পারছি। আমার এ পদ্ধতির প্রচারণায় সাধারণ মানুষও খুশি।
তবে নিজের প্রচারণা নিজে চালিয়ে নেওয়াকে সাধারণ ভোটারদের মাঝে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলেন, যাদের কর্মী নাই সমর্থক নাই, তারা কিসের ভোট পাবে? একা একা কতদূর যাওয়া যায়? আবার কেউ কেউ বলছেন, শত শত লোক নিয়ে মিছিল করলেই ভোট পাওয়া যায় না। অনেকে ‘সুবিধা’ নিয়ে মিছিলে যায়।
পেড়ীখালী এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, অন্য প্রার্থীরা দলবল নিয়ে গাড়িবহরে করে ভোট চাইতে আসেন। অনেক মানুষের ভিড়ে কখনও কখনও আমরা বিরক্ত হই। কিন্তু একা প্রচারণা চালানো প্রার্থীরা ব্যতিক্রমভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা আমাদের ভালো লেগেছে। একা থাকলে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়, ভাব বিনিময় করারও সুযোগ হয়।
মোংলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রামপাল ও মোংলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-৩ আসনে আছে একটি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন। এখানে ভোটার আছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৭৭ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২৭ হাজার ৭১৮ জন। আসনটিতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। জাসদ ও তৃণমূলের এই দুজন ছাড়া বাকিরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার, শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ইজারদার, জাতীয় পার্টির মনিরুজ্জামান মনি, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মফিজুল ইসলাম গাজী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএমের সুব্রত মন্ডল।
প্রতীক বরাদ্দের পরদিন থেকেই শুধু নৌকা আর ঈগল প্রতীকের প্রার্থীরা মাঠে নামলেও শেষের দিকে এসে এসব প্রার্থী প্রচারণায় শামিল হচ্ছেন।