দুই লাখে শুরু, ৩ বছরে খামারে আড়াই কোটি টাকার মহিষ
বাংলাদেশ

দুই লাখে শুরু, ৩ বছরে খামারে আড়াই কোটি টাকার মহিষ

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় প্রথমবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে মহিষের খামার। আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য খামারটিতে শতাধিক মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখানে রয়েছে আড়াই কোটি টাকার মহিষ। ওজন ও উচ্চতার দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহিষ এই খামারে রয়েছে বলে দাবি করেছেন খামারি। ইতোমধ্যে কিনতে খামারে আসতে শুরু করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

তিন বছর আগে হিলি সীমান্তের ক্যাম্প পট্টি এলাকায় ‘মা হাজেরা বিবি’ অ্যাগ্রো নামে খামারটি গড়ে তোলেন একই এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া (৪০)। খড়, ঘাস ও ভুসিসহ দেশি খাবার খাইয়ে মহিষগুলো মোটাতাজা করছেন। কোরবানির ঈদের জন্য ১৩৮টি প্রস্তুত রেখেছেন। এর মধ্যে দুটি নজর কেড়েছে সবার। ১৩০০ কেজির বুলডোজার ও ১১০০ কেজির বিগবস এবার পশুর হাট মাতাবে বলে জানালেন খামারি। লাইভ ওজনে কেজিপ্রতি দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা। খামারটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার ১০ যুবকের।

রাজশাহী থেকে খামারে মহিষ কিনতে আসা ইউসুফ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে বড় বড় মহিষ আছে শুনে কিনতে এসেছি। দরদামে মিললে চার-পাঁচটি কিনে নিয়ে যাবো। ঈদ উপলক্ষে আমাদের ওখানের হাটে বিক্রি করবো। সাধারণত আমাদের ওদিকে বড় মহিষের খামার নেই। তবে খামারি যে দাম চাচ্ছেন, আর আমি যা বলেছি; তাতে কিছু ব্যবধান আছে। যদি কিছু ছেড়ে বিক্রি করেন, তবেই কিনতে পারবো।’

আরেক বেপারি তসলিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে মহিষ কিনে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করি। হিলিতে মহিষের বড় খামার আছে শুনে কিনতে এসেছি। কয়েকটি পছন্দ হয়েছে। কিন্তু খামারি যে দাম চাইছেন, তাতে মিলছে না। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত দরদাম করে কিনতে পারি কিনা।’

খামারে কর্মরত শ্রমিক সবুজ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে সুমন ভাইয়ের গরুর খামার ছিল, সেটি দেখাশোনা করতাম। এখন মহিষের খামার দিয়েছেন। মহিষগুলোকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল করানোসহ সবকিছু করি। এখানে আমাদের ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে কেউ ঘাস খাওয়ায়, কেউ খড় আবার কেউ দিনে চারবার গোসল করায়। মাসে যে বেতন পাই, তা দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়ালেখাসহ আমার সংসার চলে। এলাকায় যদি আরও এমন খামার গড়ে ওঠে অনেকের কমসংস্থান হবে।’

১৩০০ কেজির বুলডোজার ও ১১০০ কেজির বিগবস এবার পশুর হাট মাতাবে বলে জানালেন খামারি

খামারের আরেক শ্রমিক আব্বাস আলী বলেন, ‘কাজকর্ম না থাকায় খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটছিল। এখন সুমন ভাইয়ের খামারে কাজ করে ভালো আছি। এখানে ১৩৮টি মহিষ রয়েছে। এগুলোর খাবার-দাবারসহ দেখাশোনার সব কাজ করি। ১৫ হাজার টাকা করে বেতন পাই, তা দিয়ে চলে আমার সংসার।’

ছোটবেলা থেকেই পশুপাখি পালনে আগ্রহ ছিল জানিয়ে খামারি সুমন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্য চাকরি কিংবা ব্যবসা না করে ছোটবেলা থেকেই গরু-ছাগল পালন শুরু করি। আগে গরুর খামার ছিল। লোকসান হওয়ায় সেটি বাদ দিয়ে মহিষের খামার দিয়েছি। এর মূল কারণ গরুর চেয়ে মহিষের অসুখ-বিসুখ কম হয়। ফলে ক্ষতির পরিমাণও কম। বর্তমানে খামারে ১৩৮টি মহিষ আছে। এর মধ্যে দুটি সবচেয়ে বড়। একটির ওজন ১১শ কেজি। নাম বিগবস। আরেকটি ১৩শ কেজি। নাম বুলডোজার। বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা আসছেন। দরদাম করছেন। তারা যে দাম বলছেন তাতে কিছুটা লাভ হচ্ছে। আরেকটু বেশি দাম পেলে বিক্রি করে দেবো।’

সব ধরনের দেশি খাবার খাইয়ে মহিষগুলোকে বড় করে তোলা হয়েছে জানিয়ে এই খামারি আরও বলেন, ‘খড়, ঘাস ও ভুসিসহ সব খাবারের দাম বেশি। ফলে খরচ বেশি পড়ছে। যদি অবৈধপথে ভারত থেকে গরু-মহিষ দেশে না আসে; তাহলে ভালো দাম পাবো। এতে লাভবান হতে পারবো। খামারে ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমার মতো কেউ যদি খামার গড়ে তোলে তাহলে আরও অনেকের কর্মসংস্থান হবে।’

খামারটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার ১০ যুবকের

খামারটি গড়তে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে সুমন মিয়া বলেন, ‘তার সঠিক হিসাব নেই। কারণ গত তিন বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে বিনিয়োগ করেছি। দুই লাখ ২০ হাজার টাকায় চারটি মহিষ কিনে খামার শুরু করি। এরপর যখন যা পেরেছি, বিনিয়োগ করেছি। বর্তমানে খামারে আড়াই কোটি টাকার মহিষ আছে।’

হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. নাছরিন খাতুন বলেন, ‘উপজেলা প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক মহিষের খামার গড়ে উঠেছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর থেকে খামারটি পরিদর্শন করা হচ্ছে। নিয়মিত খামারিকে সব ধরনের সহায়তা করছি। কীভাবে মহিষগুলো পালন করবে সে পরামর্শ দিচ্ছি। যেহেতু তাপপ্রবাহ চলমান, সেজন্য ঠান্ডা আবহাওয়ায় ও নিয়মিত গোসল করাতে হবে। কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।’ 

মহিষ পালন লাভজনক উল্লেখ করে এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যে কেউ খামার দিয়ে খুব সহজে স্বাবলম্বী হতে পারবে। কেউ যদি উপজেলায় আরও বাণিজ্যিক মহিষের খামার গড়ে তুলতে চায়, সেক্ষেত্রে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো। বেশি বেশি খামার গড়ে উঠলে মাংস আমদানি করতে হবে না।’

Source link

Related posts

কি‌শোরগ‌ঞ্জে করোনায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ জ‌নের মৃত্যু

News Desk

২০ মে থেকে ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষেধ

News Desk

আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দিন: প্রবাসীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment