ত্রাণের সব গাড়ি ফুলগাজীতে যায়, আমাদের কাছে কেউ আসে না
বাংলাদেশ

ত্রাণের সব গাড়ি ফুলগাজীতে যায়, আমাদের কাছে কেউ আসে না

ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার মতো বন্যায় ডুবে আছে দাগনভূঞা উপজেলাও। উপজেলার ১৯টি গ্রামের মানুষজন গত তিন দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছালেও এখনও দাগনভূঞায় কোনও ত্রাণ পৌঁছায়নি। এ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, সবাই ফুলগাজী, পরশুরাম নিয়ে চিন্তিত; আমাদের কেউ সহায়তা করতে আসছে না। আমরা খেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিনযাপন করছি। 

রবিবার (২৫ আগস্ট) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাগনভূঞার বারাহীগোবিন্দ, জায়লস্কর, সোনাপুর, ধর্মপুর, নেযাজপুর খুশিপুর, চানপুর, গণিপুর, দিলপুর, সমাসপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীফপুর, নন্দীরগাঁও ও নারায়ণপুরসহ ১৯টি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এসব গ্রামের সড়কে কোথাও কোমর পরিমাণ কোথাও বুকসমান পানি। অনেকে বাসাবাড়ির ছাদে অবস্থান করছেন। তাদের কাছে এখনও ত্রাণ পৌঁছায়নি।

জায়লস্কর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গণি মিন্টু আক্ষেপ করে বলেন, ‘দাগনভূঞার মানুষ বন্যায় অভ্যস্ত নয়। তাই বিপদটা সবচেয়ে বেশি। সবাই ফুলগাজী, পরশুরাম নিয়ে চিন্তিত। আমাদের কেউ সহায়তা করতে আসছে না। ফুলগাজীতে শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক যাচ্ছে। অথচ দাগণভূঁঞায় হাজারো মানুষ ত্রাণের অপেক্ষায় আছে।’

সরেজিমেন দেখা গেছে, ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলায় বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ পাঠানো হলেও দাগনভূঞায় ত্রাণ পৌঁছেনি। এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে ও বিজিবির ত্রাণ বিতরণের গাড়ি ও নৌকা দেখলেই অসহায় মানুষ ছুটে যাচ্ছেন। কিন্তু ত্রাণের পরিমাণ কম হওয়ায় সবাই পাচ্ছেন না।

বারাহীগোবিন্দ গ্রামের বাসিন্দা কামাল মিয়া করে বলেন, ‘চার দিন ধরে পানিবন্দি আছি। ত্রাণ তো দূরের কথা কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি। ঘরে কোমর সমান পানি। ত্রাণ দেওয়া কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না।’

দাগনভূঞায় খাবারের সংকটের পাশাপাশি পানির সংকটে পড়েছেন বন্যাদুর্গত মানুষজন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিক মিয়া। বলেন, ‘ঘরে পানি, বাইরেও পানি। যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। পাশের মসজিদের ছাদে আশ্রয় নিয়েছি। এখনও কোনও ত্রাণ সহায়তা পাইনি।’

এসব গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে পানি উঠেছে। হাঁটু ও কোমর সমান পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করছেন বাসিন্দারা। কেউ কেউ কলার ভেলা দিয়ে অতি জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করছেন। কেউ কেউ জাল দিয়ে মাছ ধরে খাবারের সংস্থান করছেন। বারাহীগোবিন্দ গ্রামের অনেকে পাকা বাড়ির ছাদে, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। তবে সেখানেও দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা।

ওই গ্রামে বিজিবি ক্যাম্পে রবিবার সন্ধ্যায় হাজির হন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ফজলুল করিম চিশতী ও আশ্রাফ উদ্দিনসহ কয়েকজন। বিজিবির সদস্যরা তাদের ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দিয়ে স্থানীয়দের জন্য পাঠান।

ফজলুল করিম চিশতী বলেন, ‘অনেকের সামর্থ্য থাকলেও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং দোকানপাট পানিতে ডুবে থাকায় খাদ্য কিনতে পারছেন না। আবার তাদের কাছে ত্রাণও যাচ্ছে না। খাবারের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন দাগনভূঞার মানুষজন। নলকূপ ডুবে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’

বারাহীগুনি দরবার শরিফের চেরাগী মঞ্জিলের মহিলা মেহমানখানায় দুই শিশুসন্তানসহ আশ্রয় নিয়েছেন ওই  গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নানের স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দরবারের সহায়তায় তিন বেলা খেতে পারলেও খাবার পানি নিয়ে বিপদে পড়েছি। সব নলকূপ ডুবে গেছে। গত দুই দিন ধরে কোথাও খাওয়ার পানি পাচ্ছি না।’
 
আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এর আগে কখনও আমাদের এলাকায় বন্যায় হাঁটুপানি হয়নি। অথচ এখন আমার বাড়িতে বুকসমান পানি। কখন যে বন্যার পানি নামবে, ঠিক-ঠিকানা নেই।’

ফেনী বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘শুরুতে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া উপজেলার মানুষজনকে নিয়ে তৎপর থাকলেও এখন আমরা দাগনভূঞার মানুষের কথা ভাবছি। উদ্ধারকাজের পাশাপাশি ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। আশা করছি, তাদের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে যাবে।’

Source link

Related posts

মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৬১.৪৯ শতাংশ : ওবায়দুল কাদের

News Desk

শ্বাসকষ্টে ভুগছেন খালেদা জিয়া

News Desk

বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে ডুমুরিয়ার খামারের হাঁসের মাংস

News Desk

Leave a Comment