উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে নীলফামারীর ডিমলা ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে ব্যারাজের বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক (গেজ পাঠক) মো. নুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা ও ৯টায় বিপদসীমার ৫২ দশমিক শূন্য সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার, বিকাল ৩টা ও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টা ও আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, গত দুই দিনে ব্যারাজ এলাকায় ১৩৯ দশমিক শূন্য মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে নীলফামারী জেলার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, রবিবার সকাল থেকে ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট (স্লুইসগেট) খুলে দিয়েছে পাউবো।
এদিকে, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলার পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন উঁচু ও নিরাপদ স্থানে পরিবার নিয়ে সরে যাচ্ছে বলে জানা যায়।
অপরদিকে, জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ও শৌলমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি ও কিছু ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, ‘গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কিছু বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ইউনিয়নের পূর্বছাতনাই এবং ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’
পাউবোর পানি শাখা কর্মকর্তা (হাইড্রোলজি) তহিদুল ইসলাম জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির ফলে ব্যারাজ পয়েন্ট বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ-দৌলা জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে আজ সকাল থেকে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যার পানি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে পাউবো। তিনি বলেন, ‘পাউবোর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্যা মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।’