ডেঙ্গুতে কাবু চট্টগ্রামের মানুষ, ৮ মাসে মৃত্যুর রেকর্ড
বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে কাবু চট্টগ্রামের মানুষ, ৮ মাসে মৃত্যুর রেকর্ড

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে কাবু বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ। কোনও উদ্যোগেই যেন কমছে না এ রোগ। বরং দিন দিন এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। বিগত সব বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে। একইভাবে আক্রান্তও বেড়েছে অনেক গুণ।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু কমাতে হলে রোগের বাহক মশা মারতে হবে। সামনের দিনগুলোয় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার আরও বাড়তে পারে। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। বাকিরা চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরেই চিকিৎসা নেন। তবে ডেঙ্গুতে কত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, এর কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রতিবছর মশা নিধনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। এতেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সুফল। গত ১৩ বছরে মশা নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ব্যয় করেছে ১৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ টাকা।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫ হাজার ২১৭ জন। এ সময় মারা গেছে ৫২ জন। ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৫ হাজার ৪৪৫ জন। তখন মারা গেছে ৪১ জন। ২০২১ সালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৭১ জন। ওই সময়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে ১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হলেও, মারা যায়নি কেউ।

গত ১ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ৪৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, মারা গেছে ২৭ জন। জুলাইয়ে ২ হাজার ৩১১ জন ভর্তি, মারা গেছে ১৬ জন। জুনে ভর্তি ২৮৩, মারা গেছে ৬ জন। মে-তে ৫৩ জন ভর্তি, মারা যায়নি কেউ। এপ্রিলে ১৮ জন ভর্তি, কেউ মারা যায়নি। মার্চে ১২ জন ভর্তি, কেউ মারা যায়নি। ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন ভর্তি, কেউ মারা যায়নি। জানুয়ারিতে ৭৭ জন ভর্তির পাশাপাশি মারা গেছে তিন জন।

চলতি বছর আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৩৬৪ জন, নারী ১ হাজার ৪৭৯ জন ও শিশু ১ হাজার ৩৭৪ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১৩ জন, নারী ১৮ জন ও শিশু ১৯ জন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মামুনুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আগে এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যেত। ২০২২ সাল থেকে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ করা যাচ্ছে। আক্রান্তের হারের দিক থেকেও অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি, যা রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতি বজায় থাকলে সামনে ডেঙ্গু সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু একটি এডিস মশাবাহিত রোগ। এ রোগ থেকে রক্ষায় এডিস মশা ধ্বংস করতে হবে। একইভাবে যেসব স্থানে এডিস মশা জন্মায়, সেসব স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।’

চট্টগ্রাম নগরীতে মশা নিধনের দায়িত্ব রয়েছে সিটি করপোরেশনের। প্রতিষ্ঠানটি মশা নিধনের নামে ১৩ বছরে ব্যয় করেছে ১৫ কোটি টাকা। তবে মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্ট নগরবাসী।

মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্ট নগরবাসী

নগরীর মুরাদপুর সংগীত এলাকার বাসিন্দা মো. মুনতাসির উদ্দিন রাফি বলেন, ‘এ এলাকায় দুই বছর ধরে বসবাস করছি। এর মধ্যে এক মাস আগে একবার ফগার মেশিনে মশার ওষুধ ছিটানো হয়। এরপর থেকে আর স্প্রেম্যানদের দেখা যায়নি। সিটি করপোরেশন পর্যাপ্ত ওষুধ না ছিটানোর কারণে নগরীতে উন্নয়নকাজের জন্য বন্ধ খাল, নালা এবং বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা।’

বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা নুরুল মোস্তফা জানান, ‘বহদ্দারহাটে এমন কিছু এলাকা আছে একদিন অল্প বৃষ্টিতেও সাত থেকে আট দিন পানি জমে থাকে। আর চার থেকে পাঁচ দিন পানি থাকলেই নাকি মশার বংশ বৃদ্ধি হয়। এলাকায় মাসে বা দুই মাসে একবার স্প্রেম্যানকে ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়, যা মশার ওষুধ ছিটানোর নামে লোক দেখানো মাত্র।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, মশক নিধনে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত গত ১৩ বছরে ১৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ টাকা খরচ করেছে সিটি করপোরেশন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি গবেষণা দল গঠন করি। তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শের আলোকে বর্তমানে সর্বাধুনিক মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তবে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি মশা নিধনে চাই জনসচেতনতা। কেবল ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। আমরা নিজেদের বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে।’

Source link

Related posts

বাজেটে বরাদ্দের দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতিবাদ

News Desk

বাদী-সাক্ষী সবাই কানাডায়, মুহিবুল্লাহ হত্যার বিচার নিয়ে শঙ্কা

News Desk

২২ দিন পর ঢাকার রাস্তায় নামল গণপরিবহন

News Desk

Leave a Comment