উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের উপযোগী। গত কয়েকটি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ ভালোই ফলন হয়েছে গমের। আবাদ ও উৎপাদনের দিক দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী জেলা ঠাকুরগাঁও। সরকারও এ জেলা থেকে গম কেনে সর্বাধিক। তবে এবারের চিত্রটি ভিন্ন। গমের থেকে ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় এবার জেলায় কমেছে গমের আবাদ। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর কমেছে গম আবাদ। কারণ, এবার ভুট্টার ফলন ভালো। তাই গমের চেয়ে দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই গমের ভালো ফলন হচ্ছে। তবে কৃষকেরা বলছেন, বাজারে গমের থেকে ভুট্টার দাম বেশি থাকায় সেদিকেই ঝুঁকছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়। তবে চলতি মৌসুমে ২০২০-২১ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। আবাদ ও উৎপাদনের দিক থেকে যা দেশের সর্বোচ্চ। তবে দেশের সর্বোচ্চ হলেও নিজ জেলায় গতবারের তুলনায় কমেছে এবারের আবাদ।

অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৬২৫ জন গমচাষি রয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ২৯ হাজার ১৮৪ জন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ৩৩ হাজার ২৬৫ জন, পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৮ হাজার ৫০০ জন, রানীশংকৈল উপজেলায় ১৮ হাজার ৮১২ জন ও হরিপুর উপজেলায় ১৮ হাজার ৮৬৫ জন গমচাষি রয়েছেন। এদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের তথ্যমতে, বিগত বছরের তুলনায় আবাদ কম হলেও সরকার এ জেলা থেকে গম বেশি কেনায় লাভবান হচ্ছেন জেলার কৃষকেরা।

জেলা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের তথ্যমতে, এ বছর ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৭৬৫ মেট্রিক টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। ২০২০ সালে ঠাকুরগাঁও থেকে ১২ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন গম কেনার কথা থাকলেও কেনা হয়েছে ২৪ হাজার ৬১ মেট্রিক টন। আর ২০১৯ সালে সারা দেশে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কেনা হয়। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে কেনা হয় ৬ হাজার ৬০৯ মেট্রিক টন গম। এই দুই বছরেও ঠাকুরগাঁও থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ গম কেনা হয়।

সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের গমচাষি তানজিন কবির বলেন, এবার ফলন খুব একটা ভালো ছিল না। তবে দাম বেশ ভালো পেয়েছিলাম। আমি ৫০ শতক জমিতে গম চাষ করেছিলাম। খরচ হয়েছিল প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। তবে বিক্রি করেছি ১৮ হাজার টাকা। ফলন খুব একটা ভালো না হলেও দাম পেয়েছি ভালো। তবে এবার আমাদের এখানে ভুট্টার ফলন বেশি। সেই সঙ্গে গমের তুলনায় ভুট্টার দাম বেশি পাচ্ছি। এরপর থেকে ভুট্টাই বেশি চাষ করব।

আরেক গমচাষি জয়নাল বলেন, গম গতবার করেছিলাম, এবার ভুট্টা করেছি। কারণ, ভুট্টার ফলন বেশি হয়। সেই সঙ্গে বাজারে গমের চেয়ে ভুট্টার দাম বেশি। আরেকটি মূল সমস্যা এবার আবহাওয়া খুব একটা ভালো ছিল না বলেই গম করি নাই। এখন দেখছি না করেই ভালো করেছি।

ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় গম উৎপাদনে সর্বোচ্চ। সেই সঙ্গে এ জেলা থেকে অন্যান্য জেলার তুলনায় খাদ্য বিভাগ গম কিনেছে বেশি। আমি মনে করি এটি এই জেলার কৃষকদের জন্য একটা ভালো খবর। তারা অনেকটাই লাভবান হচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের জন্য উপযোগী। সেই সঙ্গে আমরা সব সময় কৃষকদের এই গম আবাদের বিষয়ে উৎসাহিত করে থাকি। যে কারণে এখানে গমের আবাদ অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি। আমরা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই। তিনি বলেন, তবে এবার জেলায় গমের আবাদ কিছুটা কমেছে। কারণ, এবার বাজারে গমের তুলনায় কৃষকেররা ভুট্টার দাম বেশি পাচ্ছে। তবে আশা করি এবার যতটুকু কমেছে। ভবিষ্যতে এর থেকে বেশি আবাদ হবে।

Related posts

ময়মনসিংহে টাকা বিতরণ করায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীর কারাদণ্ড, বিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ

News Desk

হাকালুকি হাওরে ২৭ অতিথি পাখি হত্যা

News Desk

কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ, চাপ নেই দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে

News Desk

Leave a Comment