জমেছে ইলিশের বাজার, কমেছে দাম
বাংলাদেশ

জমেছে ইলিশের বাজার, কমেছে দাম

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশে সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম মাছের মোকাম পটুয়াখালীর মহিপুর-আলিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। প্রতিদিন সকালে ইলিশ ও বিভিন্ন মাছ নৌকা-ট্রলারে করে আড়তে নিয়ে আসছেন জেলেরা। সরবরাহ বাড়ায় কমেছে ইলিশের দাম। এতে জেলে, ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা খুশি। 

জেলেরা জানিয়েছেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম কয়েকদিন সমুদ্রে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। শীতের মৌসুম শুরু হওয়ায় ইলিশ না পাওয়ার শঙ্কায় ছিলেন তারা। ফলে জেলে এবং ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েন। তবে ৫ নভেম্বরের পর থেকে ধরা পড়ে ইলিশ। গত কয়েকদিন উপকূলের সব জেলের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। পাশাপাশি সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ পেয়েছেন। এতে জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে।

শনিবার সকালে মহিপুর-আলিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মোকামে দেখা গেছে, জেলেদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে বাজার। ইলিশ স্তূপ করে সাজাচ্ছেন জেলেরা। পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতির মাছের সরবরাহও বেশি ছিল। খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা দরদাম করে মাছ কিনছেন। এদিন দুপুরের আগেই সব মাছ বিক্রি হয়ে যায়। দুপুরের পর মাছ প্যাকেজিং শুরু হয়। বিকাল থেকে এসব মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার প্রথম কয়েকদিন মাছ ধরা পড়েনি। পঞ্চম দিন থেকে ধরা পড়ে। গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রায় প্রতিদিন এক হাজার মণ ইলিশ এসেছে। সরবরাহ বাড়ায় আকারভেদে প্রতি মণে সাত-আট হাজার টাকা দাম কমেছে। অর্থাৎ কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা কমেছে। বর্তমানে ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ১৫-১৬ হাজার টাকা। যার কেজি ৪০০ টাকা। ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ২২-২৫ হাজার টাকা। যার কেজি ৫৫০-৬০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৩৫-৩৬ হাজার টাকা। যার কেজি ৯০০ টাকা। ৯০০ থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ ৫০ হাজার টাকা। যার কেজি ১২৫০ টাকা। পাশাপাশি সামুদ্রিক অন্যান্য মাছের মণ চার থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাঙাশ, পোয়া, কোরাল, লাক্ষা, চন্দনা, ছুরি, চাপিলা, লইট্টা ও ফাইসা।

মহিপুরের জেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার প্রথম কয়েকদিন ইলিশ ধরা পড়েনি। তবে অন্যান্য মাছ ধরা পড়েছিল। গত কয়েকদিন ধরে ইলিশ পাচ্ছি। বাজারে দামও ভালো। সামনে ইলিশ কম ধরা পড়বে। কারণ শীতের মৌসুম চলে এসেছে। শীতকালে ইলিশ কম ধরা পড়ে।’

মাছ প্যাকেজিং করছেন জেলেরা

আট দিন সমুদ্রে মাছ ধরার পর গত শুক্রবার সকালে আলিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাশে নদীর ঘাটে ভিড়েছে এফবি সালেহা-১ নামের একটি ট্রলার। ট্রলারে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ ছিল। মাছগুলো মোকামে এনে মাপার পর দেখা যায় ২৫ মণ। পরে সেগুলো ১১ লাখ ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ট্রলারের মাঝি মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘ইলিশগুলোর সাইজ ছোট। তাই কম দাম পেয়েছি। এখন অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়ছে বেশি। তবে ইলিশ না পেলে অন্য মাছ দিয়ে খরচ পোষানো যায় না।’

শনিবার সকালে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাশে নদীর ঘাটে ইলিশ নিয়ে ভিড়ে এফবি তামান্না ট্রলার। পরে মোকামে নিয়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেন ট্রলার মাঝি ইউনুস মিয়া। তিনি বলেন, ‘ছয় দিন পর সমুদ্র থেকে এসেছি। এরই মধ্যে শীত শুরু হয়ে গেছে। এখন ইলিশ ধরা পড়বে কম। অন্য মাছ বেশি পাচ্ছি।’ 

এসব মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়

আলিপুর মৎস্যকেন্দ্রের আড়তদার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে মোকামে ইলিশ আসছে। তবে সরবরাহ খুব বেশি—এটা বলা যাবে না। কারণ এই মোকামে কয়েক হাজার মণ ইলিশ আসে প্রতিদিন। এখন এখন আসছে হাজারের মতো। শীত শুরু হওয়ায় মাছ ধরা পড়ছে কম। তবে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ বেশি। এজন্য ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে।’

সমুদ্রে সব ধরনের মাছের উৎপাদন বেড়েছে, নিষেধাজ্ঞার সুফল পাচ্ছেন জেলেরা—এমনটি জানালেন পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইলিশের পাশাপাশি সমুদ্রে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ছে। গত বছর ইলিশ আহরণের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর আরও বাড়বে। শীত শুরু হলেও আশা করছি, ইলিশ ধরা পড়বে। কারণ উৎপাদন বেড়েছে।’

Source link

Related posts

‘আর কতদিন পানিত থাকবো, কী খাবো?’

News Desk

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে আগামী সপ্তাহে চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন

News Desk

ভাসানচরেও রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে সহায়তা করবে জাতিসংঘ

News Desk

Leave a Comment