বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূজা ঘিরে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, বাড়ি ও  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এ উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কালীবাড়িতে বসেছে প্রতিমার হাট। আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে প্রতিমা তৈরি করছেন কারিগররা। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পূজার আগেই ক্রেতারাও দামদর করে পছন্দ মাফিক ক্রয় করছেন প্রতিমা। 

জানা গেছে, এবার কারিগররা প্রায় চার হাজার প্রতিমা বিক্রির জন্য তৈরি করেছেন। যেগুলোর বেশিরভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ও শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে সব প্রতিমাই বিক্রি হয়ে যাবে বলে ধারণা তাদের।

বাংলা পঞ্জিকা মতে, প্রতি বছর মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবীর পূজা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সে অনুযায়ী শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) হবে পূজা। তাই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ও মন্দিরের প্রতিমা কেনার জন্য ভক্তরা ভিড় করছেন শ্রীশ্রী কালীবাড়ির হাটে।

প্রতিমা কিনতে আসা বৃষ্টি কর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাসায় প্রতিবছরই পূজো হয়। কালীবাড়ির হাট থেকেই আমরা প্রতিমা কিনে নিই। বাচ্চাদের নিয়ে তাই প্রতিমা পছন্দ করছি। যেটা পছন্দ হবে সেটা কিনে নেবো।

 কটিয়াদী থেকে বন্ধুদের নিয়ে প্রতিমা নিতে এসেছেন সুমন সরকার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের পাড়ায় সরস্বতী পূজা করে থাকি। এবারও আমরা পূজার আয়োজন করেছি। সে জন্যই প্রতিমা নিতে এসেছি। কয়েকদিন আগেই এখানে এসে একটি প্রতিমা সাত হাজার টাকা সাব্যস্ত করে বায়না দিয়ে গিয়েছিলাম। প্রতিমা প্রস্তুত হয়ে গেছে তাই এখন বাকি টাকা দিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি।   

দীর্ঘদিন থেকে কিশোরগঞ্জের কালীবাড়িতে প্রতিমা বিক্রি হলেও তিন বছর থেকে এর ব্যাপকতা লাভ করে । এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে কারিগররা একমাস আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করে প্রতিমা তৈরি ও বিক্রি করে থাকেন। এ বছর অন্তত চার হাজার প্রতিমা তৈরি করেছেন তারা। রঙ করার আগেই অর্ধেক প্রতিমা বায়না করে চুক্তি করে ফেলেছেন আয়োজক ও ক্রেতারা। রঙ শেষ হলেই নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের প্রতিমা। 

কারিগররা জানান, এবার প্রতিমার হাটে আকার ভেদে ছোট, মাঝারি ও বড় প্রতিটি প্রতিমা এক থেকে দশ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারছেন তারা।

 নেত্রকোনা থেকে আসা প্রতিমা কারিগর গণেশ পাল বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই আমি কালীবাড়ির হাটে প্রতিমা বানাই। প্রচুর বিক্রি হয় এখান থেকে। এবারও অনেক প্রতিমা তৈরি করেছি। বেশিরভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। যে কয়টা বাকি আছে আজই হয়তো বিক্রি হয়ে যাবে।

প্রতিমার আরেক কারিগর নারায়ণ পাল বলেন, আসলে পূজার কয়েকদিন আগে থেকেই এই হাটে একটা উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করে। কেউ প্রতিমা কিনতে আসেন, আবার বাচ্চাদের নিয়ে একসঙ্গে এত প্রতিমা দেখতেও আসেন অনেকে। ছাত্র ছাত্রীরাই বেশি আসেন প্রতিমা কিনতে। আমার হাতেগোনা কয়েকটা ছাড়া সব প্রতিমাই বিক্রি হয়ে গেছে।

 হাটের প্রতিমা শিল্পীদের এক মাস আগে থেকেই থাকা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে কালীবাড়ি কর্তৃপক্ষ। পূজাকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো কিশোরগঞ্জের পাড়া ও মহল্লার বিভিন্ন ক্লাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসাবাড়িতে পূজার আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।

শ্রীশ্রী কালীবাড়ির সাধারণ সম্পাদক পলাশ দত্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা প্রতিবারই হাটের আয়োজন করছি। প্রচুর মানুষ এখান থেকে প্রতিমা কিনে নিয়ে যায়। এক মাস আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে কারিগররা এখানে আসে প্রতিমা তৈরি করতে। আমরা তাদের সার্বিক নিরাপত্তা ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকি। কয়েক হাজার প্রতিমা এখান থেকে বিক্রি হয়। প্রতিমা দেখতেও প্রচুর মানুষ এখানে ভিড় করে।

 

Source link

Related posts

‘আমি কোরআন পড়ে দোয়া করি, আপনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হোন’

News Desk

যশোরে ট্রেনের ধাক্কায় ব্যবসায়ীর মৃত্যু

News Desk

ট্রেনে আসে হানাদাররা, রাজাকারদের গুজবে নিরীহ বাঙালিদের ওপর নৃশংস তাণ্ডব

News Desk

Leave a Comment