ঢাকার কলাবাগানে চিকিৎসক কাজী সাবেরা রহমান লিপি হত্যাকাণ্ডের ৯ দিন পার হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত তদন্তের কিনারা করতে পারেনি। মামলার তদন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে একই বৃত্তে। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা নিশ্চিত যে, ওইদিন লিপি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং খুনি তার পূর্ব পরিচিত। যে কারণে তিনি নিজেই বাসার দরজা খুলে দিয়েছেন। তবে ওই খুনি কে তা নিশ্চিত করতে পারেনি তদন্তকারীরা। বাসার দারোয়ানের কাছে তারা তথ্য পেয়েছেন যে, চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ডা. লিপির বাসায় যাতায়াত করতেন। কিন্তু, শ্যামলা রংয়ের পাতলা ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায়নি। এ খুনের ঘটনায় মূলত দুইজনকে ঘিরে তদন্ত করছে মামলার তদন্তকারীরা।
তারা দুইজন লিপির চেনাজানা।
তবে তাদের নাম জানানো হয়নি। একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আরেকজনকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। মূলত ওই ঘাতক লিপির বেডরুমে ঢুকে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ছাড়াও এ ঘটনার সঙ্গে আর কারও লিয়াজোঁ আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রুমের মধ্যে যে সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে তা পরীক্ষা করে মামলার তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, হত্যাকারী লিপির পূর্বপরিচিত। সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিকেই খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাসায় সিসি ক্যামেরা না থাকার কারণে খুনিকে চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ ছাড়াও লিপির মোবাইলের সিডিআই বিশ্লেষণ করছেন তারা। পুলিশের পাশাপাশি এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদঘাটন করতে মাঠে কাজ করছে র্যাবও।
গত ৩০শে মে দুপুরে কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভাড়া বাসা থেকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে ওই বাসায় আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যান। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সাবিরার শরীরে রক্তাক্ত চিহ্ন দেখে বুঝতে পারেন যে এটি একটি খুন। পরে পুলিশ গিয়ে ডা. লিপির লাশ উদ্ধার করে। খুনের ক্লু উদ্ধারে থানা পুলিশ ছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ মাঠে কাজ করছে। সূত্র জানায় এ ঘটনায় নিহতের মামাতো ভাই বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাতনামাদের আসামি করেন। পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা খুনের মোটিভ উদ্ধারে কাজ করছে। কলাবাগানের ওই বাসায় লিপি থাকলেও তার দুই সন্তান নানির কাছে থাকতো। তার স্বামীও আলাদা বাসায় থাকতেন। লিপির প্রথম স্বামী একজন চিকিৎসক ছিলেন। গত ৫ বছর আগে তিনি এক দুর্ঘটনায় মারা যান।
এ বিষয়ে পুলিশের নিউমার্কেট জোনের এসি শরিফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান গতকাল দুপুরে মানবজমিনকে জানান, ‘আমরা মামলার ক্লু উদঘাটনের চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত খুনের মোটিভ জানা যায়নি। যাদের সন্দেহ হচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভিকটিমের মামাতো ভাই ও মামলার বাদী রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল বলেন, মামলার তদন্তকারীদের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। খুনিকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।
মামলার তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন লিপির বাসায় সাবলেটে থাকা তরুণী কানিজের অবস্থান নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধারের আগের রাতে খুন হয়েছেন ডা. লিপি। বাসায় থাকা কানিজ ওই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মামলার তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। তিনি ঘরে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। মামলার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা কানিজকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে। কানিজের সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে তাকে দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, মামলার তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, একজনই লিপির বেডরুমে তাকে হত্যা করে পালিয়েছে। তাকেই খুঁজছে পুলিশ। লিপির মোবাইল ফোন থেকে যেসব নম্বর জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর সিডিআর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে হত্যাকাণ্ডে দুইজন সন্দেহের তালিকায় আছেন বলে মামলার তদন্তকারীরা জানিয়েছে। তবে তারা দুইজনের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। এরমধ্যে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি পুলিশ। ওই সন্দেহভাজন এখন ডিবি পুলিশের পর্যবেক্ষণে আছে। তার অতীত কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, লিপির বাসায় কারা যাতায়াত করতো তা বাসার দারোয়ানের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নিয়েছে পুলিশ। ৪০ ঊর্ধ্ব এক ব্যক্তির তথ্য পেয়েছেন তারা। কিন্তু, ওই ব্যক্তিকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।