ঘূর্ণিঝড় হামুন: বিশুদ্ধ পানির সংকট, এখনও কাটেনি বিদ্যুৎ-নেটওয়ার্ক বিপর্যয়
বাংলাদেশ

ঘূর্ণিঝড় হামুন: বিশুদ্ধ পানির সংকট, এখনও কাটেনি বিদ্যুৎ-নেটওয়ার্ক বিপর্যয়

ঘূর্ণিঝড় হামুন তাণ্ডবের দুই দিন পার হলেও কক্সবাজারে এখনও বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয় কাটেনি। পাশাপাশি বেশিরভাগ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও দুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ না পৌঁছায় দুর্ভোগে আছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় অনেকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। এদিকে, ত্রাণ দ্রুত পৌঁছানোর কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাতে কক্সবাজারে তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড় হামুন। মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে লন্ডভন্ড করে দেয় কক্সবাজার শহরসহ জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও চকরিয়াসহ আশপাশের এলাকা। অসংখ্য গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি সড়কে উপড়ে পড়ে। এরপর থেকে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। বন্ধ থাকে প্রযুক্তি নির্ভর মানুষের যোগাযোগ। বিদ্যুৎ না থাকায় শহরের মানুষ তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েন। একইভাবে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়া বাড়িঘর হারানো মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। তবে দুই দিন ধরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢেউটিন, চাল, চাল ও নগদ টাকা দুর্গতের মানুষের মাঝে বিতরণ করলেও তা অপ্রতুল বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা।

কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়াপাড়া এলাকার পারভেজ আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার দুই দিন পার হলেও এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। যার কারণে, বাসা-বাড়িতে খাওয়ার জন্য মোটর থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে আমরা সীমাহীন দুর্ভোগে আছি।’

একই এলাকার ফাতেমা বেগম বলেন, ‘কোনও ধরনের মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। কোনও দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর সংবাদ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এখনও পর্যন্ত এলাকা অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তূপ পড়ে রয়েছে।’

শহরের সমিতিপাড়া এলাকার শাহেনা আক্তার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমার বাসার ওপর গাছ পড়েছে। ঘরটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু কোনও ধরনের সহায়তা পায়নি। ঢেউটিন দেওয়ার কথা শুনেছি। চোখে দেখিনি। এমনকি এক মুঠো চালও পাইনি।’

কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পৌর কাউন্সিলর আক্তার কামাল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমার এলাকা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঘর ভেঙে গেছে। খোলা আকাশের নিচে অনেকে দিন কাটাচ্ছেন। এ কারণে খুব দ্রুত সময়ে ত্রাণ পৌঁছানো দরকার। যতটুক ত্রাণ পৌঁছেছে তা পর্যাপ্ত নয়।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কক্সবাজার জেলার ৭১ ইউনিয়ন ও কক্সবাজার, মহেশখালীসহ দুটি পৌরসভা। হামুনের তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুতের ৩৫৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। বিকল হয়েছে ২৩টি ট্রান্সফরমার। ৪৯৬ স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। ৮০০টি স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলায় ৩৭ হাজার ৮৫৪টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা চার লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন।’

বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুল হক। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যেভাবে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি রাস্তার ওপর উপড়ে পড়েছে তা স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে। খুব দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।’

এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ যাতে কষ্ট না পাই সে জন্য দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয় দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেজ শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিধ্বস্ত বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের এক হাজার বান্ডিল ঢেউটিন, ৩০ লাখ টাকা ও শিশু খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

দিন যতই যাচ্ছে, ততই ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। তাই, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক চালু করে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার কথা বলছেন সাধারণ মানুষ।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আঘাত হানে কক্সবাজারে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে মৃত্যু হয় তিন জনের। ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত ৩৭ হাজার বাড়িঘর। অসংখ্য গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁড়ি ভেঙে গিয়ে অচল হয়ে পড়ে কক্সবাজারের জনজীবন। এতে পানির তীব্র সংকট, নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎসহ নানা দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।

Source link

Related posts

সাতক্ষীরায় করোনায় আরও ৯ জনের মৃত্যু

News Desk

মাঘের বৃষ্টিতে ডুবলো খুলনার সড়ক

News Desk

স্বামীর নির্যাতনে ঘরছাড়া গৃহবধূকে শ্বশুরবাড়ি তুলে দিল পুলিশ

News Desk

Leave a Comment