মাদারীপুরে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে যমজ ভাইবোন সাদিয়া আক্তার ও জিহাদ। তারা শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশনে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়েছে।
জানা গেছে, শিবচরের ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের নেছার শিকদারের কান্দি গ্রামের কৃষক শওকত হোসেন চোকদার ও সাথী আক্তারের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে সাদিয়া ও জিহাদ সবার বড়। ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হওয়ায় গ্রাম থেকে পৌর এলাকামুখী হয় পরিবারটি। একসময় সৌদি আরব থাকার সুবাদে শিবচর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের চার শতাংশ জমি কিনে ছেলেমেয়েদের জন্য বসতি স্থাপন করেন শওকত চোকদার। পাঁচ বছর আগে সৌদি থেকে এসে নিজ এলাকায় কৃষি কাজ করেন। কষ্টের মধ্যেও সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন।
তবে ছেলেমেয়ে ভালো ফলাফল করলেও আগামীতে তাদের কলেজের খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বাবা-মা। আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় এসএসসিতে ভালো ফল করা এই শিক্ষার্থী।
সাদিয়া আক্তার বলে, ‘আমি ডাক্তার হতে চাই। স্কুলের স্যারেরা আমাদের অনেক সহযোগিতা করতেন। বাবা-মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেন।আ মি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে চেষ্টা করবো তাদের সম্মান ধরে রাখতে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
তবে জিহাদ ঢাকার ভালো কলেজে ভর্তি হতে চায়। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেও সে ঢাকার সরকারি কলেজে পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভবিষ্যতে সে প্রকৌশলী হতে চায়।
তাদের মা সাথী আক্তার জানান, স্বামীর স্বল্প রোজগারে সংসার চালিয়ে ছেলেমেয়ের জন্য আলাদা ব্যয় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তবুও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে তারা চেষ্টা করেন। বাসার কাজকর্ম সেরে যেটুকু সময় পান সেটুকু সময় তার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় করেন। এভাবেই এত দিন কষ্ট করে পার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সামনে ছেলেমেয়ে দুটিকে ঢাকার ভালো কলেজে ভর্তি করতে চাই। এতে অনেক চাপ পড়বে। তবুও আমরা চেষ্টা করবো ওদের পড়াশোনা চালাতে।’
তাদের প্রতিবেশী রেশমা আক্তার বলেন, ‘সাদিয়া ও জিহাদ আমাদের পুরো গ্রামের গর্ব। অভাব অনটনসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নিজেদের অদম্য ইচ্ছে শক্তিতে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে দুজন। আমি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।’
তাদের বাবা শওকত চোকদার বলেন, ‘পৈতৃকসূত্রে পাওয়া আমার গ্রামের বাড়ি সঙ্গে সামান্য মাঠের জমি আছে। যখন সৌদি ছিলাম ১৭/১৮ বছর আগে শিবচরে চার শতাংশ জমি কিনে এই বাড়ি করি। বর্তমানে কৃষি কাজ করে সংসারটা চালাচ্ছি। অভাব-অনটন থাকলেও সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। তারা জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমরা উচ্ছ্বসিত। তবে ভবিষ্যতে তাদের শহরে রেখে ভালো কলেজে পড়াশোনা করাতে অনেক খরচ করা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
এ বিষয়ে শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা যমজ দুই ভাই বোন সাদিয়া ও জিহাদ। তারা খুবই মেধাবী। স্কুল থেকে যখন যে সুবিধা দেওয়ার তা দিয়েছি। পড়াশোনায় তারা যেন আরও এগোতে পারে এ জন্য বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকরা তাদের প্রতি খেয়াল রাখতো। তাদের এমন সাফল্যে অভিভূত শিক্ষকরা।’