গেম খেলে মানসিক রোগী, রাস্তায় ভাঙলো ২০ গাড়ি
বাংলাদেশ

গেম খেলে মানসিক রোগী, রাস্তায় ভাঙলো ২০ গাড়ি

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মোবাইলে ফ্রি ফায়ার গেম খেলে মানসিক ভারসাম্য হারানো এক তরুণ সড়কে থাকা অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ওই তরুণের নাম হারেছ রাকিব (২০)। সে উপজেলার বাহাম গ্রামের ফজল হকের ছেলে।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে মোহনগঞ্জ পৌর শহরের বসুন্ধরা মোড়ে ভাঙচুরের এ ঘটনা ঘটায় রাকিব। এ সময় রাস্তার পাশে থামানো মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজি ও অটোরিকশাসহ অন্তত বিশটি গাড়ি লাঠির আঘাতে ভাঙচুর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাকিব নামের ওই তরুণ শহরের হাসপাতাল রোডের শৌখিন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থাকা সিএনজি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাসে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। পরে সড়ক দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বসুন্ধরা মোড় পর্যন্ত সামনে যে গাড়ি পড়েছে সবগুলো লাঠির আঘাতে ভেঙে দিয়েছে। একপর্যায়ে বসুন্ধরা মোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির চালক ও মালিকরা রাকিবকে আটক করে তার দুই হাত একটি ভবনের সঙ্গে বেঁধে রাখে।

খবর পেয়ে পুলিশও সেখানে হাজির হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন রাকিবকে তার বাবার হাতে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্বস্ত করলে ভুক্তভোগীরা রাকিবকে ছেড়ে দেয়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মাইক্রোসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। লাঠির আঘাতে কোনোটার ট্যাংকি চ্যাপ্টা হয়েছে, কোনটার কাচ ভেঙেছে। রাস্তার পাশেই পড়ে আছে কাচের ভাঙা টুকরো। হঠাৎ ভাঙচুরের ঘটনায় কিছু সময়ের জন্য রাস্তায় গাড়ি চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এসব দেখেতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে যায়।

বসুন্ধরা প্লাজার দোকানি প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ওই ছেলেটা অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। হয়তো পাগল নয়তো অতিরিক্ত নেশা করেছে। হাতে থাকা লাঠি দিয়ে সড়কে থামানো সব গাড়ি ভেঙে দিয়েছে। পরে লোকজন নিরুপায় হয়ে তাকে বেঁধে রেখেছে। ভাগ্য ভালো যে কোনও মানুষকে আঘাত করেনি। শুনেছি গতকাল বারহাট্টা এলাকায় একজন মানুষকে পিটিয়ে চলে এসেছে।’

ক্ষতিগ্রস্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক শহরের বাসিন্দা শফিক মিয়া বলেন, ‘চাকার টায়ার পরিবর্তন করে রাস্তার পাশে সিএনজিটা রেখে বাসায় গিয়েছিলাম। এসে দেখি লাঠি দিয়ে আঘাত করে সামনের কাচ ভেঙে দিয়েছে। এই কাচের দাম ১২ হাজার টাকা। ছেলেটা পাগল বা নেশাখোর বলে মনে হচ্ছে। মেম্বার সাহেব বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।’

গেম খেলে মানসিক রোগী, রাস্তায় ভাঙলো ২০ গাড়ি

তিনি আরও জানান, সে অসুস্থ হলে অভিভাবকদের উচিত বাসায় আটকে রাখা। রাস্তায় ছাড়লে তো এভাবে আমাদের মত গরিবের ক্ষতি করবে।

বাহাম গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘রাকিব একসময় সুস্থ ছিল। প্রায় দুই বছর আগে মোবাইলে অতিরিক্ত মাত্রায় ফ্রি ফায়ার গেম খেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। পরে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর পর কিছুটা ভালো হয়েছিল। গত ছয় মাস ধরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে আবার রাকিবের মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। গাড়ি ভাঙার বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি সমাধান করে দেব।’

এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ থানার এসআই মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘গাড়ি ভাঙার খবর পেয়ে গিয়ে ওই তরুণকে তার বাবার হাতে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। ছেলেটাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছে। কী কারণে এমন অবস্থা তার এ বিষয়ে জানা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিকরা এ বিষয়ে এখনও অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Source link

Related posts

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিএনপির সদস্যসচিব

News Desk

কুয়াকাটায় পর্যটন ব্যবসায় ধস, হরতাল-অবরোধ চান না ব্যবসায়ীরা

News Desk

বাবার বয়সী ঠিকাদারকে চড় মারলেন এসিল্যান্ড, বললেন ‘মীমাংসা হয়ে গেছে’

News Desk

Leave a Comment