কৃষকের গরু চুরি করে ভূরিভোজের আয়োজন বিএনপি নেতার
বাংলাদেশ

কৃষকের গরু চুরি করে ভূরিভোজের আয়োজন বিএনপি নেতার

জামালপুরের মাদারগঞ্জে গরু চুরি করে নেতাকর্মীদের জন্য ভূরিভোজের আয়োজন করার অভিযোগে ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।

অব্যাহতি পাওয়া ওই নেতার নাম মাহমুদুল হাসান ওরফে মুক্তা। তিনি মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। লোকজন দিয়ে গরু চুরি করিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন করার অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় যুবদলের এক কর্মীসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা মহিলা দলের সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসানের বাড়িতে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। মাহমুদুল হাসান ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক লায়লা খাতুন ইতি এই আয়োজন করেন। ভোজের জন্য স্বামী-স্ত্রী লোকজন দিয়ে শুক্রবার রাতে উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের দক্ষিণ খামার মাগুরা এলাকার কৃষক এফাজ মণ্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করিয়ে আনেন। ওই গরু জবাই করে আজ তার বাড়িতে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। ভোরের দিকে ওই ‍কৃষক তার গোয়ালঘরে গরু না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।

স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও গরু চুরির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন উপজেলার কয়ড়া বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. বজলুর কাছে গরুর মাথা ও চামড়া দেখতে পান। পরে ওই মাথা ও চামড়া এফাজ মণ্ডলের গরুর বলে শনাক্ত করা হয়। মাংস ব্যবসায়ী বজলু স্থানীয় লোকজনকে জানান, বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান ও যুবদল কর্মী সুমন মণ্ডল তাকে ওই গরুর মাংস কাটতে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিষয়টি শুনে উত্তেজিত স্থানীয় লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই নেতার বাড়িতে যান। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যুবদল কর্মী সুমন ও মাংস ব্যবসায়ী বজলুকে আটক করে। এ সময় গরুর চামড়া, মাথা ও কিছু মাংস জব্দ করে পুলিশ।

এ ঘটনায় গরুর মালিক এফাজ মণ্ডল বাদী হয়ে শনিবার বিকালে মাদারগঞ্জ থানায় মাহমুদুল হাসানসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সুমন মণ্ডল ও বজলুকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলা বিএনপি মাহমুদুল হাসানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দলের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্নের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাহমুদুল হাসানকে দলীয় পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো। একইসঙ্গে তাকে কেন দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, সেটি আগামী সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিএনপি নেতা মঞ্জুর কাদের বলেন, ওই ঘটনায় আপাতত তাকে সাময়িকভাবে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে। তদন্তে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে স্থায়ীভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চোরাই গরু উদ্ধারে পুলিশের অভিযানের খবর শুনে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি

এ ব্যাপারে মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আজ উপজেলায় মহিলা দলের কর্মী সমাবেশ ছিল। সমাবেশে আমার ইউনিয়ন থেকে নারীদের নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ জন্য ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড থেকে নারীদের নিয়ে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছি। মাংস ব্যবসায়ী বজলুর কাছ থেকে ৭৬ কেজি মাংস কিনেছি। তিনি কোথা থেকে গরুটি এনেছেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমার বাড়িতেই বজলুর আনা গরুটি জবাই করা হয়। তিনি ৭৬ কেজি মাংস মেপে বাকিগুলো নিয়ে যান। রাতে রান্না হচ্ছিল। পরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে লোকজন আমার বাড়িতে এসে জানান, গরুটি চুরি করে আনা হয়েছে।’

মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, ‘অব্যাহতি পাওয়া বিএনপি নেতা চুরি করা গরু দিয়ে খাবারের আয়োজন করেন। ওই খাবার তার লোকজনের খাওয়ার কথা ছিল। খবর পেয়ে নেতার বাড়ি থেকে হাতেনাতে দুজনকে আটক করা হয়। একইসঙ্গে গরুর মাথা, চামড়া ও কিছু মাংসও জব্দ করা হয়। এ গরুর মালিক থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় আটক দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’

Source link

Related posts

৮ মাস ঘুরেও হচ্ছে না এনআইডি সংশোধন, সেবা প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ

News Desk

ময়মনসিংহ মেডিকেলে ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের মৃত্যু

News Desk

দশ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকোটি

News Desk

Leave a Comment