ময়মনসিংহে চার কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও মেরামত কাজ ফেলে রেখে গত দুই বছর ধরে লাপাত্তা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) এক ঠিকাদার। ফলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প সদরের শম্ভুগঞ্জ থেকে বোররচর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের মাঝে চার কিলোমিটার এলাকাবাসীর জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কজুড়ে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্তের কারণে পথচারীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ঠিকাদার ও এলজিইডির গাফিলতির কারণে লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়ন থেকে জয় বাংলা বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল। সংস্কারের অভাবে এই পথে হেঁটে চলাও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা শুরুর পর সড়কটি কাদাপানিতে একাকার হয়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে গর্ত আর গর্ত। এসব গর্তে জমে আছে পানি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শম্ভুগঞ্জ বাজার থেকে বোররচর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও মেরামতকাজ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সড়ক সংস্কার হয়ে গেছে। তবে চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়ন থেকে জয় বাংলা বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কে ইটের খোয়া ফেলে সংস্কারকাজ শুরুর পর লাপাত্তা হয়ে যান ঠিকাদার। ফলে গত দুই বছর ধরে ওই অবস্থায় পড়ে আছে। সড়কের বেহাল দশা এলাকাবাসীর ভোগান্তি অসহনীয় করে তুলেছে। সবজি ও কৃষিপণ্য পরিবহনসহ সময়মতো গন্তব্যে যাওয়া যাচ্ছে না। বেড়েছে পরিবহন খরচ। প্রতিদিন গর্তে পড়ে রাস্তার ওপর বিকল হচ্ছে যানবাহন।
সড়ক খানাখন্দে ভরপুর থাকায় পথচারীরা দুর্ভোগের শিকার জানিয়ে জয় বাংলা বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রউফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শম্ভুগঞ্জ-পরানগঞ্জ-বোররচর সড়ক দিয়ে বোররচর, পরানগঞ্জ, সিরতা ও চর ঈশ্বরদিয়াসহ আশপাশের গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ ময়মনসিংহ শহরে যাতায়াত করেন। গত দুই বছর ধরে সড়কের সংস্কারকাজ পড়ে থাকায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় এসব গর্তে পানি জমে মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। দীর্ঘ পথ ঘুরে ময়মনসিংহ সদরে যেতে হয়। এতে বিশেষ করে রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত সবজি ও কৃষিপণ্য পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে ন্যায্যদাম পাচ্ছেন না অনেক কৃষক। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
ঠিকাদার ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে আমাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে উল্লেখ করে বোররচর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘সড়কটির স্থানে স্থানে ইট উঠে মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। বর্ষা শুরু হওয়ার পর কাদাপানিতে একাকার হয়ে আছে। আশপাশের গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়ি পেতে কষ্টকর হয়। মালামাল আনতে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিতে হয়।’
ভোগান্তির কথা জানিয়ে শম্ভুগঞ্জের ট্রাকচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘সড়কের যে অবস্থা তাতে মনে হয়, এই বুঝি গাড়ি উল্টে গেলো। যন্ত্রপাতি তো নষ্ট হচ্ছেই। সেইসঙ্গে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।’
সড়কটি বেহাল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান ইমরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চার কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ ফেলে রাখায় এলাকার মানুষকে অনেক পথ ঘুরে জেলা সদরে যেতে হয়। প্রসূতিসহ জরুরি রোগী নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতেও শঙ্কা কাজ করছে অনেকের। অথচ দুই বছরেও এলজিইডি সংস্কার কাজে আন্তরিকতার প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের আওতায় তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে চার কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাদিয়া অ্যান্ড সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু ঠিকাদার সড়কে ইটের খোড়া ফেলে গত দুই বছর ধরে কাজ বন্ধ রেখেছেন। এলজিইডির সঙ্গে কোনও ধরনের যোগাযোগ করছেন না। এ অবস্থায় তার সঙ্গে চুক্তিপত্র বাতিল করেছে এলজিইডি।
এ ব্যাপারে জানতে সাদিয়া অ্যান্ড সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. সাইফুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে এলজিইডির ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত কবির ঠিকাদারের গাফিলতির কথা স্বীকার করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাফিলতির কারণে তাদের সঙ্গে চুক্তিপত্র বাতিল করেছি আমরা। এরই মধ্যে টেন্ডার ডেকে নতুন ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরুর কথা রয়েছে নতুন ঠিকাদারের। আশা করছি, কাজ শেষ হলে মানুষের দুর্ভোগ কেটে যাবে।’