কনকনে বাতাসে শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নড়াইলের তিন উপজেলার সাধারণ মানুষের জীবন। বিশেষ করে দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন বেকায়দায়। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। বৈরী আবহাওয়ায় গত তিন দিন ধরে শীতের তীব্রতা বাড়ায় জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন রোজগার কমে যাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
রবিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। যে কারণে সারা দিন শীতের তীব্রতা ছিল বেশি। গত শুক্রবার থেকে শীতের তীব্রতা বেড়েছে এ জেলায়। দিন পেরিয়ে রাত এলেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটার মতো কুয়াশা ঝরছে। তীব্র হিমেল বাতাসে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষজনের অবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক দিনমজুর কাজের সন্ধানে সকালে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। প্রচণ্ড শীতে আর কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কাজের সন্ধানে ছুটছেন কর্মজীবী মানুষেরা। শীত উপেক্ষা যারা বের হচ্ছেন তারা স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকায় বেকার বাড়ি ফিরছেন। শহরের রাস্তাগুলোতে লোকজনের চলাচল কম থাকায় দেখা দিয়েছে যাত্রী সংকট। রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যানচালকরা যাত্রী না পাওয়ায় আয় কমেছে তাদের। বাসের যাত্রীও অর্ধেকে নেমে এসেছে। দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চালাতে হচ্ছে যানবাহনগুলো।
এদিকে রাত ও দিনে তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিন ও রাতে ঠান্ডা প্রায় একই রকম অনুভূত হচ্ছে। অসহায়, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। শীতের তীব্রতায় মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুরাও ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে।
জেলার লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলহাটা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম জানান, তারা ভোর থেকেই মাঠে কাজ করেন। কিন্তু তীব্র শীত আর কনকনে ঠান্ডা বাতাসের কারণে মাঠে কাজ করতে পারছেন না। বৈরী আবহাওয়ায় কৃষিকাজে প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে।
নড়াইল শহরের ভ্যানচালক মো. ফারুক খান (৪২) ও লিয়াকত খান (৬২) বলেন, ‘ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। আগে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হতো। গত তিন দিন ধরে সারা দিনেও ৩০০ টাকার বেশি আয় হচ্ছে না। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। একদিকে আয় কম, অন্যদিকে বাজারের সব জিনিসের দাম বেশি। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে।’
নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী জানান, তীব্র শীতে অসহায়, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের শীত নিবারণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীতার্ত মানুষের জন্য জেলায় ২৪ হাজার ৩৬৫টি কম্বল বরাদ্দ এসেছে। এগুলো বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।