ঐতিহ্যবাহী ‘গুটিদাড়া’ খেলা দেখতে দর্শকদের ঢল
বাংলাদেশ

ঐতিহ্যবাহী ‘গুটিদাড়া’ খেলা দেখতে দর্শকদের ঢল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর এলাকা শেরপুরে সদ্য তোলা ফসলি জমিতে অনুষ্ঠিত হলো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গুটিদাড়া খেলা। বিশিষ্ট ক্রীড়ামোদী চিকিৎসক ফরিদুল হুদা স্মরণে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উভয় দলের ২২ জন খেলোয়াড় অংশ নেন। পরে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।

রবিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরের পর থেকেই মাঠে জড়ো হন বিভিন্ন বয়সী দর্শক। গুটিদাড়া খেলার সময় তারা মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে উৎসাহ জোগান। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে জেলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে ধরে রাখার আহ্বান জানান খেলোয়াড়রাসহ দর্শকরা।

সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলির শেরপুরে দেখা যায়, লাল ও সবুজ দুই দলে বিভক্ত হয়ে বাঁশের দেড় হাত লম্বা দাড়া ও ঘুঁটি নিয়ে অংশ নেন খেলোয়াড়রা। খেলার নিয়মানুযায়ী মহিষের শিং দিয়ে তৈরি বিশেষ গোলাকৃতির ঘুঁটিতে প্রায় দেড় হাত লম্বা বাঁশের দাঁড়া দিয়ে আঘাত করে নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে পাঠাতে হয়।

আর বিপরীত দিকে অবস্থান করা ১১ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে কেউ একজন লুফে নিলে প্রতিপক্ষের পয়েন্ট কাটা বলে গণ্য হয়। এভাবে প্রথমে ঘুঁটিতে আঘাত করতে নেমে নির্ধারিত ৩০ মিনিটের মধ্যে লাল দল ১২ পয়েন্ট অর্জন করে।

জবাবে সবুজ দলের খেলোয়াড়রা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৩ পয়েন্ট অর্জন করে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যান। এ সময় দর্শকরা করতালি দিয়ে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেন।

জানতে চাইলে দর্শক ও খেলোয়াড়রা জানান, হারিয়ে যেতে বসা গুটিদাড়া খেলাকে মাঠে ফিরিয়ে আনা হলে যুবসমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে। খেলাধুলা শারীরিক ও মানসিক গঠনে সাহায্য করে।

ইমরান খান নামে একজন খেলোয়াড় বলেন, গুটিদাড়া খেলা ঐতিহ্যবাহী খেলা। এটি এখন দেখা যায় না। আমরা চাই খেলাটি যেন সব সময় গ্রামগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়। হারিয়ে যাওয়া এই খেলা যেন মাঠে আবারও ফিরে আসে।

বৃদ্ধ খেলোয়াড় শাহজাহান খান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে গুটিদাড়া খেলা দেখে আসছি এবং খেলে আসছি। খেলার জন্য আমরা শাহবাজপুর, সরাইলসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু আমাদের বর্তমান যুগের ছেলেরা এইসবের ধারেকাছে নেই। আমরা চাই এমন খেলা বেশি বেশি আয়োজন করা হোক। তাহলে যুবকরা মোবাইলে আসক্তি কমিয়ে খেলাধুলার দিকে মনোযোগী হবে।

খেলা দেখতে আসা শাকিল মিয়া বলেন, আমি জন্মের পর থেকে এই খেলা দেখে আসছি। তার আগে আমরা বাবা-চাচারা গুটিদাড়া খেলেছিলেন। এখন আমরা দেখতে আসছি। খেলা দেখে আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। আমরা চাই এই খেলা যেন সব সময় চালু থাকে।

উভয় দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রয়াত ক্রীড়ামোদী চিকিৎসক ফরিদুল হুদার ছেলে দেশের খ্যাতিমান চিকিৎিসক ডা. নাজমুল হুদা বিপ্লব বলেন, আমার বাবা রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি খেলাধুলার জন্য উৎসাহিত করতেন। তিনি গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে হারিয়ে যাওয়া খেলাগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে মাঠে ফিরিয়ে আনতেন। এমন একটি খেলা গুটিদাড়া।

তিনি আরও বলেন, সুস্থ দেহ ও সবল মনের জন্য খেলাধুলার কোনও বিকল্প নেই। অনেক লোক যে খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সেসব খেলাকে উৎসাহিত করা উচিত। তাই আমি বাবার পথ ধরেই এখানে এসেছি। এই খেলাকে ধরে রাখার জন্য আমি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

খেলার আয়োজক জেলা সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, বাঙালির হারিয়ে যাওয়া এই খেলাটি সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে যদি গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এই খেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটিকে ধরে রাখার জন্য আগামী দিনে আরও বড় আকারে টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে। এতে একাধিক দল অংশগ্রহন করার কথাও জানান তিনি।

ঘণ্টাব্যাপী চলা খেলায় উভয় দলের ২২ জন খেলোয়ার অংশগ্রহণ করেন। পরে উভয় দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

Source link

Related posts

বাড়ি ফিরতে ৭ রাখাইন পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

News Desk

ভালোবাসা দিবসে কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

News Desk

রাজশাহীতে ৮টা বাজার সঙ্গেই পড়লো দোকানের শাটার

News Desk

Leave a Comment