ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাত দিনের মাথায় বরিশাল ঘুরে গেলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মেজো ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ। তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফ। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মঈন আব্দুল্লাহর বাবা বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই। মঈনের ভাই সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র। সরকার পতনের দিন তাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে প্রাইভেটকারে বরিশালে আসেন মঈন। প্রাইভেটকারটি নিজেই চালাচ্ছিলেন। এ সময় পাশে বসেছিলেন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফ।
নগরীর কাউনিয়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে কালো রঙের একটি প্রাইভেটকার চালিয়ে বরিশাল নগরীতে আসেন মঈন। এ সময় সামনের আসনে বসা ছিলেন মুয়াজ। বেলা আড়াইটার দিকে মঈন কাউনিয়া ফার্স্ট লেনে তার নানা বাড়িতে আসেন। তাদের গাড়ির সঙ্গে দুটি সাদা প্রাইভেটকার ও তিনটি মোটরসাইকেল ছিল। সেই বাড়িতে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে বের হওয়ার সময় স্থানীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন মঈন ও মুয়াজ। কাউনিয়া থেকে বের হয়ে নগরীর কালিবাড়ি রোডে সেরনিয়াবাত ভবনে যান তারা।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর এই বাসভবনটি সরকার পতনের দিন পুড়িয়ে দিয়েছিল বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। এই বাড়ি থেকে তিন জনের লাশ উদ্ধার হয়। যার মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের টানা পাঁচবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুর লাশও ছিল। মঈন ও মুয়াজ বাড়িটি বাইরে থেকে দেখেন। তবে ভেতরে যাননি তারা। পরে কালীবাড়ি রোড থেকে নগরীর মুসলিম গোরস্থানে গিয়ে মা বেগম সাহানারা আব্দুল্লাহ ও কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুর কবর জিয়ারত করে বরিশাল ত্যাগ করেন।
হঠাৎ বরিশাল সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে মঈন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার জন্মস্থান বরিশালে আমি যাবো, এতে অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসায়ী, এফবিসিসিআইর পরিচালক এবং সিআইপি। দুপুরের একটু আগে বরিশালে গিয়েছিলাম। মায়ের কবর জিয়ারত করেছি। তারপর কাউনিয়া এলাকায় মামা বাড়িতে গিয়েছি। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়েছি। এরপর ফিরে এসেছি।’
এই সফরে উপদেষ্টার ছেলের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, ‘সে তো আমার ছোটবেলার বন্ধু। সেই শিশুকাল থেকে আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। বন্ধুত্ব আর রাজনীতি মিলিয়ে ফেলবেন না।’
পুড়ে যাওয়া পৈতৃক বাড়ির ভেতরে না যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা হাসানাত আব্দুল্লাহকে ছাড়া ওই বাড়িতে আমি কি করে যাই? পত্র-পত্রিকায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আমাদের বাড়ির যেসব ছবি দেখেছি, তাতে সেখানে গেলে হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবো না। ওই বাড়ির সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনেকবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমার দাদা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের গড়া ওই বাড়িতে কোনোদিন একটা ঢিলও পড়েনি। যতদূর জানি, আমার পরিবারের কেউ কখনও এভাবে কারও বাড়ি পোড়ায়নি। আমি বাবার সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করি। ওই বাড়িতে যখন যাবো তখন বাবার সঙ্গেই যাবো।’
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার ছেলেকে নিয়ে হাসানাতপুত্র মঈনের এই সফর ঘিরে বরিশালে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে উপদেষ্টার ছেলের আসাটাকে ভালোভাবে নেননি রাজনীতিবিদরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, পুরো বরিশালকে ১৫টি বছর শাসন করে অস্থিতিশীল করেছে হাসানাতের পরিবারটি। এখন তাদের প্রকাশ্যে ঘোরাটা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। মঈন সেই শাসকের ভাইয়ের ছেলে। তার সঙ্গে উপদেষ্টার ছেলের বরিশাল আসাটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। বন্ধুত্ব অথবা আত্মীয়তা থাকতে পারে, তবে সবার আগে দেশ এবং দেশের মানুষের কথা ভাবা উচিত ছিল মুয়াজের। এটি মুয়াজের বাবাকেও বিতর্কে ফেলবে।’