এবার বিনা চাষে সরিষা আবাদ করেছেন ময়মনসিংহের কৃষকরা। বিনা খরচে সরিষা আবাদ করে ফলন ভালো হওয়ার প্রত্যাশা তাদের। আগামীতে সরিষার আবাদ আরও বাড়বে বলছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে, বিনা চাষে সরিষা আবাদ করে লাভবান হবেন কৃষকরা।
ময়মনসিংহ সদরের ঘাগড়ার চকনজু গ্রামের শহীদুল্লাহ মোড়লের ছেলে কৃষক রুবেল মিয়া (৩৫)। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শসহ প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার পেয়ে ৩৩ শতক জমিতে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করেছেন। এই আবাদে তার কোনও খরচ হয়নি। নিজেই সরিষা ক্ষেতের পরিচর্যা করেন। সরিষার বাম্পার ফলন হবে এবং লাভবান হবেন এমনটাই প্রত্যাশা এই কৃষকের।
রুবেল মিয়া জানান, বিনা চাষে সরিষার আবাদ করা যায় এটা তার জানা ছিল না। পরে মোবাইলে ইউটিউবে বিনা চাষে সরিষার আবাদের বিষয়টি তিনি প্রত্যক্ষ করেন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হন। এরপর কৃষি বিভাগ থেকে ৩৩ শতক জমির জন্য ১ কেজি বারি সরিষা বীজ, ডিইপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি পেয়েছেন। রোপা আমন ধান কাটার পরে গত বছরের ১১ নভেম্বর ওই জমিতে কোনোরকম চাষ না দিয়েই বিনা চাষে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। এরপর কিছু দিনের মধ্যেই সরিষার চারা গজিয়ে ওঠে। এরপর প্রণোদনার সার জমিতে প্রয়োগ করেছেন। নিড়ানিসহ খরচ ছাড়াই এভাবেই সরিষার আবাদ করেন। এখন ফুল এসে সরিষার মাঠজুড়ে হলুদ রঙ ধারণ করেছে। বাম্পার ফলন আশা করছেন রুবেল।
শুধু রুবেল মিয়া নন, তার মতো অনেক কৃষকই চলতি মৌসুমে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করেছেন। বিনা চাষে সরিষার আবাদ করা যায় এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। একই গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন জানান, বিনা চাষে সরিষার আবাদ করা যায় এটা তাদের জানা ছিল না। গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া এই সরিষার আবাদ করায় বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিনা খরচে এবং লাভজনক হওয়ায় আগামীতে অনেক কৃষক এই সরিষার আবাদ করবেন বলে জানান তিনি।
গোপালনগর গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন বাদল চলতি মৌসুমে আমন ধান কাটার আগেই ওই জমিতে সরিষা বীজ বপন করেন। এর ১৫ দিন পরে আমন ধান কেটে ফেলেন। ওই জমিতে সরিষার চারা গজিয়ে ওঠে। পরে কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনা হিসেবে পাওয়া সার জমিতে প্রয়োগ করেন। এ ছাড়া আর কোনও খরচ করতে হয়নি সরিষা আবাদে। তিনি জানান, বিনা চাষে সরিষা আবাদের বিষয়টি তার ছেলে মোবাইলের ইউটিউবে দেখেছে। এরপরই কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে আমন ধান কাটার আগেই সরিষা বীজ ছিটিয়ে দিয়েছেন। সরিষার ফলন ভালো হবে দাবি করে তিনি আরও জানান, সরিষা প্রায় পাক ধরে আসায় আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সরিষা কেটে ঘরে তোলা যাবে। এরপর সরিষা বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে জমিতে বোরো ধান আবাদের প্রস্তুতি নেবেন।
আরেক কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিনা চাষে সরিষা আবাদে কোনও খরচ হয় না, এটা নাসিরের আবাদ দেখে আমরা জানতে পেরেছি। আগামীতে আমরাও আমন ধান কাটার আগে সরিষা বীজ জমিতে বপন করবো।’
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩১ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বিনা চাষে সরিষার আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে। বিনা চাষে লাভজনক হওয়ায় আগামীতে সরিষা আবাদে কৃষকরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ড. উম্মে হাবিবা।
তিনি জানান, এবারই প্রথম জেলায় বিনা চাষে সরিষার আবাদ করেছে কৃষকরা। সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারিভাবে কৃষি বিভাগ থেকে ২২ হাজার কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে ১ কেজি করে সরিষা বীজ, ডিইপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ৩৫ হাজার ৫০০ কৃষককে ১ কেজি করে সরিষা প্রদান করা হয়েছে।
কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিনা চাষে সরিষা আবাদ সারা দেশে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।