কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় বাড়িতে যাওয়ার সড়ক তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন উপকারভোগীরা। তারা বলছেন, খাদ্য সহায়তা চান না, বাড়িতে যাওয়ার সড়কটি চলাচলের উপযোগী চান।
উপকারভোগীদের অভিযোগ, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় গুচ্ছগ্রামে মাটি ভরাট ও রাস্তা সংস্কারের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কয়েক ট্রাক মাটি ফেলে সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে মুন্সিবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের ঘরগুলোতে যাওয়ার রাস্তায় প্রায় দেড় ফুট উচ্চতায় পানি জমে আছে। টানা কয়েকদিনের জলাবদ্ধতায় পানিতে শ্যাওলা জন্মেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় নোংরা পানিতে কাদা মাড়িয়ে চলাচল করছেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। ঘরের বারান্দার সামনে পানি, চারপাশে পানি। নোংরা এসব পানির মাঝেই বাস করছেন তারা।
দুর্ভোগের কথা জানিয়ে প্রকল্পের বাসিন্দা খুশি বেগম বলেন, ‘জমে থাকা পানিতে অনেক ময়লা-আবর্জনা। শিশু-বয়স্ক মানুষ চলাচল করতে পারে না, ঘর থেকে বের হতে পারে না। শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সময় পোশাক, বইপত্র ভিজে যায়। এটি আমাদের এখন বড় সমস্যা। কেউ খোঁজ নিতে আসলো না। আমাদের কেউ দাম দেয় না। আমরা খাবার চাই না, একটু মাটি দিয়ে সড়ক উঁচু করে দিলে আমাদের উপকার হয়।’
আরেক বাসিন্দা মেনেকা রানি বলেন, ‘আমাদের দুর্দশা দেখার কেউ নেই। এভাবে বসবাস করা যায়? চারপাশে পানি। একটু বৃষ্টি হলে পানি জমে। ২০ দিন ধরে পানিবন্দি। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। বাড়িতে প্রতিবন্ধী সন্তান আছে। কখন পানিতে পড়ে যায় এই দুশ্চিন্তায় আছি।’
আব্দুল্লাহ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘কোনও ঘরে ইট খুলি গেইছে। কোনও ঘরে ফাটল ধরছে। কখন যে ওয়াল শরীরের ওপর ভাঙি পড়বে, কেউ বলতে পারে না। এমন অবস্থা ঘরগুলোর।’
প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাট প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা শিউলি ও জরিফ উদ্দিন বলেন, হালকা করি মাটি দিছে। এক গাড়ি করি মাটি ছিটায় দিয়া গেইছে। বৃষ্টি হইলে পানি জমে, ঘরের ভেতর পানি ঢোকে। আমাদের খুব সমস্যা। কিন্তু আমাদের সমস্যা দেখার কেউ নাই।
প্রকল্প এলাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলেও সেগুলোর সুবিধাভোগ করতে পারছেন না এখানের বাসিন্দারা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে করা পানি সরবরাহের এই প্রকল্পের কোনোটির কল নেই, আবার কোনোটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। আবার কোনোটির ট্যাংকে ফাটল থাকায় পানি ওঠানো সম্ভব হয় না।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুন্সিবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি ভরাট ও রাস্তা সংস্কারের জন্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কাবিটা প্রকল্পে যথাক্রমে ছয় লাখ ও চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, এই বরাদ্দের এক চতুর্থাংশ অর্থও প্রকল্পের মাটি কাটায় খরচ করা হয়নি।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাট ও রাস্তা সংস্কারে টিআর প্রকল্পের বরাদ্দ থাকলেও তা বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে মঙ্গলবার দুপুরে উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সিরাজুদ্দৌলার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন, ‘মুন্সিবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো আমি যোগদান করার আগে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকল্পে জলাবদ্ধতার বিষয়টি জেনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। মাটি ভরাট ও সড়ক সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবো।’