আলু চাষিদের স্বপ্নে বৃষ্টির হানা, জলাবদ্ধতায় বিশাল ক্ষতির সম্ভাবনা
বাংলাদেশ

আলু চাষিদের স্বপ্নে বৃষ্টির হানা, জলাবদ্ধতায় বিশাল ক্ষতির সম্ভাবনা

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম ও লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে মুন্সীগঞ্জ জেলায় অধিকাংশ ফসলি জমিতে পানি জমাটবদ্ধ হয়ে আছে। তলিয়ে গেছে অনেক জমি। এ ছাড়া বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা কমে শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে জমিতে রোপণ করা আলুর বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় আলু রোপণ শুরু হয়। এর মধ্যে ছয় উপজেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি রোপণ করা হয় দুই হাজার কেজি বীজ আলু।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টিপাত দীর্ঘমেয়াদী হলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে। তবে পানি অপসারণ করা গেলে ক্ষতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন।

আলু চাষিরা বলছেন, সারা দেশে আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, আলু চাষিরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় এই মৌসুমে বেশি করে আলু চাষ করেছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ও লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। এভাবে টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে রোপণ করা বীজ আলুর ৭০-৮০ শতাংশ নষ্ট হবে। এ ছাড়া অবশিষ্ট আলুতেও আশানুরূপ ফলন হবে না। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের হোগলাকান্দি এলাকার আলু চাষি লোকমান মিয়া জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে আলু খেতের রোপণ করা সব বীজ পচে যাবে। কারণ জমি নিচু হওয়ায় ইতিমধ্যে জমিতে পানি জমে গেছে। এই জমাটবদ্ধ পানি অপসারণের সুযোগ নেই। তাই আমরা খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। এ বছর আলুর দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে অতিরিক্ত মুনাফার আশা করেছিলাম। তাই এ বছর ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বেশি করে আলু রোপণ করেছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেই স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেলো।

একই ইউনিয়নের আরেক চাষি মোস্তফা মিয়া জানান, বছরের এই সময়ে এতো বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল না। এমন টানা বৃষ্টির ফলে ক্ষেতের আলু নষ্ট হয়ে যাবে। সবেমাত্র কিছুদিন আগে আলুর বীজ রোপণ করেছি। এখনও বৃষ্টি থামার লক্ষণ দেখছি না। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষেতের পানি অপসারনের সুযোগ নেই। ফলে ক্ষেতের অনেক আলু বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। এতে বিশাল অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের আমঘাটা এলাকার আলু চাষি ছাত্তার হোসেন বলছেন, একেবারে অসময়ে বৃষ্টি হয়েছে। এই সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা না। তবে এটা কৃষকদের জন্য বড় ধরনর দুঃসংবাদ। আর এটা আলু চাষের মৌসুম। আর মাটির নিচে রোপণ করা আলুর বীজ একটু পানি পেলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ক্ষেত্রের অধিকাংশ আলু পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সান্ত্বনা রানী বলেন, ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে রোপণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিতে এখানকার আলু ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতি হবে। যদি ক্ষেত থেকে বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণ করা সম্ভব না হলে, ব্যাপক হারে ক্ষতি হবে।

Source link

Related posts

দখলদার চক্রের কবলে ভৈরব নদী, দেয়াল তুলে কৃষকদের পানি নিতে বাধা

News Desk

মিরসরাইয়ে বিষ ঢেলে পুকুরের মাছ নিধন

News Desk

বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির জন্য বাড়ছে হাহাকার

News Desk

Leave a Comment