আম ও গরু পরিবহনের স্পেশাল ট্রেনে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি
বাংলাদেশ

আম ও গরু পরিবহনের স্পেশাল ট্রেনে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে চালু করা ম্যাঙ্গো এবং ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনে আয়ের চেয়ে ব্যয় হয়েছে বেশি। ২০২০ সালে চালু হওয়া বিশেষায়িত এই ট্রেনে গত চার বছরে শুধু তেলে অর্ধকোটি টাকা লোকসান গুনেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে তিন হাজার ৯৯৫ মেট্রিক টন আম পরিবহন হয়েছে। একই সময়ে ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনে ২৪৫টি গরু ও ৪৩৩টি ছাগল পরিবহন হয়েছে। যা থেকে রেলের আয় হয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। তবে চার বছরে শুধু তেল খরচের হিসাবে ট্রেনের খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ফলে চার বছরে বিশেষায়িত এই ট্রেনের লোকসান হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকা।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৫ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ৪৬ দিন চলেছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর ট্রেনে এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হয়। তবে ওই বছর ট্রেনে কোরবানির পশু পরিবহন হয়নি। ২০২১ সালের ২৭ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৫০ দিন চলেছিল ম্যাঙ্গো স্পেশাল। ওই বছর দুই হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন আম পরিবহন হয়েছিল এতে। একই বছরে ১৩১টি গরু ও ১১২টি ছাগল পরিবহন হয়।

২০২২ সালের ১৩ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সাত দিন চলেছিল এই ট্রেন। ওই বছর ১৭৯ মেট্রিক টন আম, ৩৬টি গরু ও ১৬০টি ছাগল পরিবহন করা হয়েছিল। চলতি বছরের ৮ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ১৮ দিন ট্রেন চলেছে। এ বছর ৩৮২ মেট্রিক টন আম, ৭৮টি গরু এবং ১৬১টি ছাগল পরিবহন করা হয়।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, লাভ-লোকসানের হিসাব নয়; চাষি, ব্যবসায়ী ও খামারিদের স্বার্থে এই ট্রেন চালু করা হয়েছে। ফলে লোকসান হলেও উপকার হয়েছে চাষি ও ব্যবসায়ীদের।

তবে চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ট্রেনে তাদের তেমন আগ্রহ নেই। কম মূল্যে আম পরিবহন করা গেলেও স্টেশনে আম আনা-নেওয়ার কারণে পরিবহন খরচ বেড়েই যায়। এতে বাড়তি কিছু ঝামেলা থাকায় সড়কপথকে বেছে নিচ্ছেন তারা।

তানোর উপজেলার গরুর ব্যাপারী আবদুস সামাদ বলেন, ‘ট্রেনে গরু পরিবহনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। গরুকে আগে বাড়ি থেকে অন্য গাড়িতে করে স্টেশনে নিতে হয়। এরপর আবার স্টেশন থেকে অন্য গাড়িতে করে হাটে নিতে হবে। এসব ঝামেলা এড়িয়ে ট্রাকে করে সরাসরি বাড়ি থেকে হাটে গরু নেওয়া সহজ। ফলে ট্রেনে আগ্রহ কম আমাদের।’

পবা উপজেলার নওদাপাড়া এলাকার আম ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান বলেন, ‘ট্রেনে কম পয়সায় আম পরিবহন করা গেলেও দুইবার অন্য পরিবহনে আনা-নেওয়ার খরচ বেশি হয়ে যায়। এর চেয়ে সড়কপথে আম পরিবহন করা সহজ। এ জন্য ট্রেনে আমরা আম পাঠাই না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আম চাষি মেহেদী হাসান বলেন, ‘কুরিয়ারে আম পরিবহনে খরচ হয় কেজিপ্রতি ১২-১৮ টাকা। অন্যদিকে, ট্রেনে একই পরিমাণ আমে খরচ মাত্র এক টাকা ৩২ পয়সা। সরকার গত কয়েক বছর লোকসান দিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে আম পরিবহনের জন্য ট্রেনটি চালু করেছে। তবে চাষিদের নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালাতে হবে। সেইসঙ্গে আমাদের মতো চাষিদের আগে থেকেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাহলে ট্রেনের লোকসান কমবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদের সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘আমের মৌসুমে জেলা প্রশাসন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে রেলের লোকসান হবে না। কারণ, অনেকে ট্রেনের কথা জানেন না। তারা কুরিয়ার সার্ভিসে লোকসান দিয়ে আম পাঠান। কাজেই সঠিক উদ্যোগ নিলে এবং চাষি ও খামারিদের যুক্ত করা গেলে রেলের লোকসান কমে আসবে।’

রাজশাহী সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘আম ও কোরবানি পশু ট্রেনে পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সেই সঙ্গে আমের মৌসুম ও কোরবানির আগে ট্রেন চালুর আগে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। একসময় রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনে অনেক লোকসান হতো। এখন তা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। তাই আম ও কোরবানি পশু পরিবহনও একসময় জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে সাধারণত সাতটি ওয়াগন থাকে। এসব ওয়াগনে ৩০১ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতি কেজিতে এক টাকা ৩২ পয়সা ও রাজশাহী থেকে এক টাকা ১৭ পয়সায় ঢাকায় আম নেওয়া যায়। এবার ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি ওয়াগন যুক্ত করে কোরবানির পশু পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়াগনের জন্য রেলওয়ে ভাড়া নির্ধারণ করেছিল ১১ হাজার ৮৩০ টাকা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘রেলের লাভ-লোকসান হিসাবে নয়; চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে প্রতি বছর এই সেবা চালু রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। জনস্বার্থে অনেক খাতেই সরকার ভর্তুকি দেয়। এই ট্রেন সার্ভিসটাও অনেকটা সেরকম। এ ছাড়া ট্রেন চালুর আগে আমরা প্রচারণা চালাই। সামনে আরও ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালাবো আমরা।’

Source link

Related posts

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নতুন বিমানবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

News Desk

অক্সিজেন পেলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল

News Desk

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সীমান্তে ‘রেড অ্যালার্ট’

News Desk

Leave a Comment