আমন ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাজপুরের চাষিরা
বাংলাদেশ

আমন ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাজপুরের চাষিরা

দিনাজপুরে আমন ধানের ক্ষেতে বেড়েছে বাদামি গাছফড়িংয়ের উপদ্রব। আবার কিছু কিছু ক্ষেতে লেইট ব্লাইট ও ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় কীটনাশক ও বালাইনাশক স্প্রে করেও মিলছে না সুফল। ধান পাকার আগমুহূর্তে এসব রোগ দেখা দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শস্যভান্ডারখ্যাত দিনাজপুরের কৃষকের মাঠে মাঠে সোনালি ধান দোল খাচ্ছে। কয়েকদিন পরই উঠবে ঘরে। তবে পাকার আগমুহূর্তে ধানে দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। কোনও কোনও ক্ষেতে গাছফড়িং, আবার কিছু ক্ষেতে লেইট ব্লাইট ও ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ। 

চিরিরবন্দর, সদর, বিরলসহ কয়েকটি উপজেলার ধানক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কোনও কোনও কৃষক কাটতে শুরু করেছেন। তবে বেশ কিছু জমির ধানগাছ মরে যাচ্ছে, আবার পরিপক্ব হওয়ার পরিবর্তে শুকিয়ে যাচ্ছে কোনও কোন ক্ষেতের ধান। কিছু ক্ষেতের ধানের শিষ পাউডারের মতো গুঁড়া হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কীটনাশক ও বালাইনাশক স্প্রে করছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, ধানে পাক ধরার পর হঠাৎ শিষগুলোর কোনোটি মরে চিটা হয়ে যাচ্ছে, আবার কোনোটি শুকিয়ে হলুদ পাউডার হয়ে ঝরে পড়ছে। বেশিরভাগ জমিতে বাদামি গাছফড়িং, লেইট ব্লাইট ও ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ইঁদুরের উপদ্রব রয়েছে। এজন্য কেউ কেউ আধাপাকা ধান কাটছেন, আবার কেউ কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। তবে কীটনাশক স্প্রে করেও কাজ হচ্ছে না। 

সদরের ফাজিলপুর ইউনিয়নের ঝানজিরা ঘোষপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ধারদেনা করে দুই বিঘা জমিতে আমন ধান করেছি। ধানের অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু পাকার আগমুহূর্তে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এখন কীটনাশক স্প্রে করছি। এতে খরচ বাড়ছে। পোকা আক্রমণ না করলে ফলন ভালো হতো।’ 

ঝানজিরা বাজার এলাকার অনিমা রানি মোহন্ত বলেন, ‘ধান পাকার আগমুহূর্তে পোকার উপদ্রবে নষ্ট হচ্ছে ক্ষেত। বাদামি গাছফড়িং, মাজরা পোকা, লেদা পোকা অনেক বেশি। ধানের গাছ খেয়ে ফেলছে। এতে ফলন কম হবে, কারণ পোকার আক্রমণে ধানগাছ মরে যাচ্ছে। এখনও আমাদের এলাকায় কোনও কৃষি কর্মকর্তা আসেননি। কীটনাশক দিয়েও কোনও ফল পাচ্ছি না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

কৃষকরা বলছেন, প্রয়োজনীয় কীটনাশক ও বালাইনাশক স্প্রে করেও মিলছে না সুফল

একই দুশ্চিন্তার কথা জানালেন সদরের খামারকান্তবাগ এলাকার কৃষক মো. সাত্তার মিয়া। তিনি বলেন, ‘পোকায় সব ফসল মেরে ফেলতেছে। কীটনাশক দিচ্ছি, এতে শেষ মুহূর্তে খরচ বাড়ছে। যা অবস্থা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে এবার ফলন কম হবে। ফলন কম হলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’

একই এলাকার কৃষক কালিচন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার ক্ষেতের ধান ভালো আছে। তবে পাশের ক্ষেতে পোকা লেগেছে। এখন দুশ্চিন্তা লাগতেছে, যদি আমার ক্ষেতেও পোকা লাগে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

চার বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছি, কিন্তু পোকার আক্রমণে এখন দিশেহারা উল্লেখ করে আরেক কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, ‘ধানের অবস্থা খুব খারাপ। মাজরা পোকা ধরেছে, গোড়ায় পচন ধরেছে। কীটনাশক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এ পর্যন্ত চারবার কীটনাশক দিয়েছি। বাড়তি খরচের কারণে লোকসান হবে এবার।’

ধান পাকার আগমুহূর্তে এসব রোগ দেখা দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, ‘দিনাজপুরে এবার চার লাখ ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। কিছু ধান কাটছেন কৃষকরা। কিছু কাটার উপযোগী হয়েছে। এরই মধ্যে পোকা আক্রমণ করেছে কিছু ক্ষেতে। কিছু ক্ষেতে বাদামি গাছফড়িংয়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেতে লেইট ব্লাইট ও ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ। এর কারণ রাতে কুয়াশা পড়ছে, দিনে রোদের মাত্রা বাড়ছে। কৃষকদের ধানগাছের গোড়ায় স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাদামি গাছফড়িং পোকার উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে মিটিং করে লিফলেট বিতরণ করছেন। স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যাবে। তবে ফলন কিছুটা কম হবে অনেক কৃষকের। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমি আবাদ হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’

Source link

Related posts

বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হলো কবর খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গ্রেনেড

News Desk

১৫ জেলায় জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট শুরু ১৭ ফেব্রুয়ারি 

News Desk

গরু ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের দিন শেষ

News Desk

Leave a Comment