আবাসিক এলাকায় ময়লার ভাগাড়, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বাসিন্দারা
বাংলাদেশ

আবাসিক এলাকায় ময়লার ভাগাড়, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বাসিন্দারা

কুড়িগ্রাম পৌরসভায় আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় পাইকপাড়া আবাসিক এলাকায় সড়কের পাশে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থায় সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে নাক চেপে চলাচল করছেন। অন্যদিকে মশা-মাছি ভনভন করছে সবসময়। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে এলাকাবাসী। 

স্থানীয় লোকজন বলছেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে সড়কের পাশে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। অথচ এখান থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করেন না পৌরসভার কর্মীরা। সড়কটি এখন ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। পৌর মেয়র বেআইনিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবাসিক এলাকায় আবর্জনা ফেলছেন। তাকে অনুরোধ করলেও কোনও কাজ হয়নি।

পৌর কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকাণ্ডকে অবিবেচনা প্রসূত উল্লেখ করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরে অভিযোগ দিয়েছে এলাকাবাসী। কিন্তু এসবের পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নিয়মিত আবর্জনা ফেলা অব্যাহত রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে কুড়িগ্রাম-মোগলবাসা সড়ক ধরে পাইকপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধের ঢালের গর্তে আবর্জনা ফেলে কয়েকশ মিটারের বিশাল স্তূপ তৈরি করা হয়েছে। সড়ক ও আবর্জনার স্তূপ একই সমতলে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে ওই স্থান দিয়ে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য। আবর্জনার স্তূপে মশা-মাছি ভনভন করছে। কয়েকটি কুকুর আবর্জনা ঘেঁটে উচ্ছিষ্ট খুঁজছে। নাকে কাপড় গুঁজে পথচারীদের ওই স্থান দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। গন্ধে সড়কের আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকাই দায়।

আবর্জনার স্তূপ বরাবার সড়কের উভয় পাশে বেশ কিছু বসতি। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গন্ধ তো আছেই। মশা-মাছির যন্ত্রণায় বাড়িতে থাকতে পারি না। শিশুদের অসুখ-বিসুখ লেগে আছে। আবর্জনার স্তূপে আসা কুকুর মাঝেমধ্যে আমাদের পোষা ছাগলকে কামড় দেয়। এটি তো ময়লা ফেলার জায়গা না। তবে পৌর মেয়র ক্ষমতার জোরে ময়লা ফেলছেন।’

আরেক বাসিন্দা ও মাদ্রাসাশিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, ‘দুর্গন্ধে বাড়িতে বসবাস করতে পারছি না। শিশু-বয়স্ক সবাই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। মশা-মাছির যন্ত্রণায় বাড়িতে খেতে বসা যায় না। খাবার তো বটেই, খাবারের সময় মাছি গিয়ে মুখেও পড়ে। পৌর কর্তৃপক্ষের এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আবাসিক এলাকায় কোন বিবেচনায় ময়লা ফেলছে তারা, তা বুঝে আসে না। আমরা এখান থেকে আবর্জনার স্তূপ অপসারণ চাই।’

দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির যন্ত্রণায় এই এলাকায় বসবাস করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে ওই এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। মেয়র আমাদের এলাকার বাসিন্দা। তিনি যদি এসব না দেখেন, তাহলে কার কাছে যাবো।’

মানুষকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে আবাসিক এলাকায় আবর্জনা ফেলা পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বলে জানালেন পাইকপাড়ার বাসিন্দা ও শহরের এমএ সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন ফারুক। তিনি বলেন, ‘ওই জায়গা পৌরসভার নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় মেয়র নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবর্জনা ফেলে এলাকাবাসীকে ভোগান্তিতে ফেলেছেন। মানুষজন দুর্গন্ধে বসবাস করতে পারছেন না। এ নিয়ে পৌরসভা, পাউবো ও পরিবেশ অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। কুড়িগ্রাম নদীমাত্রিক এলাকা। এখানে ময়লা ফেলার মতো অনেক ফাঁকা জায়গা আছে। জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে ওই এলাকায় ময়লা ফেলার প্রয়োজন পড়ে না। বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলবো।’

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র মো. কাজিউল ইসলাম বলেন, ‘আগে থেকে ওই স্থানে ময়লা ফেলা হয়। আমরা ডাম্পিংয়ের জন্য জায়গা খুঁজছি। জায়গা পেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ ডাম্পিং স্টেশন সরিয়ে নেওয়া হবে।’

কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মানুষের বসবাসের সমস্যা হলে সেখানে ময়লা ফেলা উচিত নয়। বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Source link

Related posts

রবিবার থেকে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট

News Desk

পাহাড় কেটে রাস্তা প্রশস্ত করছে এলজিই‌ডি

News Desk

বাড়েনি লঞ্চ-ফেরি, বেড়েছে দুর্ভোগ

News Desk

Leave a Comment