‘আগে লঞ্চে কেবিন পাওয়া যেতো না, এখন খালি’
বাংলাদেশ

‘আগে লঞ্চে কেবিন পাওয়া যেতো না, এখন খালি’

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে যাত্রী কমেছে। বরগুনা থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলোতে দেখা গেছে, আগের চেয়ে যাত্রী কম। তবে যাত্রী কমলেও কমেনি লঞ্চ ভাড়া। লঞ্চগুলোতে যাত্রীসেবার মান না বাড়ালে টানাপোড়েনে পড়বেন নৌযান মালিকরা, এমনটি বলছেন যাত্রীরা।

বরগুনা নৌ-বন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য দুটি নৌপথ রয়েছে। দুই নৌপথে নিয়মিত সাতটি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে দুটি লঞ্চ ছেড়ে যেতো। আমতলী লঞ্চঘাট থেকে একটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। পদ্মা সেতু চালুর পর বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে দুটির পরিবর্তে একটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। অপরটি যাত্রী হলে চলে, না হয় বন্ধ থাকে।

আমতলী লঞ্চঘাটে দেখা গেছে, ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তরঙ্গ-০৭ লঞ্চ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে লঞ্চটিতে যেমন যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল, সেটি এখন নেই। অল্প যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় লঞ্চটি। 

লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানায়, তরঙ্গ-০৭ লঞ্চের ডেকে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৭৪৯ জন। রয়েছে চারটি ডাবল কেবিন, ৪৪টি সিঙ্গেল কেবিন, চারটি ভিআইপি কেবিন ও চারটি ফ্যামিলি কেবিন। লঞ্চের সুপারভাইজার সবগুলো কেবিন বুকিং হয়েছে জানালেও ছাড়ার সময় কেবিন ফাঁকা দেখা গেছে। ডেকে ছিল দেড় থেকে দুইশ যাত্রী।

তরঙ্গ-০৭ লঞ্চের সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগের তুলনায় যাত্রী কমেছে। তবে সামনে ঈদ। যাত্রী বাড়বে।’ 

একই অবস্থা দেখা গেছে বরগুনা লঞ্চঘাটে। ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বরগুনার বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চ রাজারহাট-বি। এই লঞ্চে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহনের সুনাম রয়েছে। লঞ্চে গিয়ে দেখা গেছে, ডেকের অর্ধেক খালি। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করতো লঞ্চটি, সেখানে সবমিলিয়ে যাত্রী ছিল এক থেকে দেড়শ। 

এমকে শিপিং লাইন্সের মালিকানাধীন রাজারহাট-বি লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লঞ্চটির ডেকে ধারণক্ষমতা ৫৬০ জন। এছাড়া সিঙ্গেল কেবিন ২১টি, ডাবল কেবিন ৩৭টি, ভিআইপি চারটি, ফ্যামিলি চারটি। এর মধ্যে সবগুলো সিঙ্গেল কেবিনে যাত্রী থাকলেও বাকি কেবিনে যাত্রী ছিল অর্ধেকের কম। 

লঞ্চে কথা হয় ঢাকাগামী যাত্রী মো. সাগরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর ফলে লঞ্চযাত্রী অনেক কমেছে। আগে এসব লঞ্চে কেবিন পাওয়া যেতো না। এখন কেবিন খালি রয়েছে। কয়েকদিন আগেও ডেকের যাত্রী ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি দেখেছি। এখন ডেকে যাত্রী নেই বললেই চলে।’

বরগুনার বাসিন্দা ঢাকাগামী লঞ্চযাত্রী মামুন মিয়া বলেন, ‘আমি নিয়মিত এই পথে ঢাকায় ব্যবসায়িক কাজে যাতায়াত করি। বরগুনার যে দুটি লঞ্চঘাট, সেখানে আগের দিন কেবিন বুকিং না দিলে কেবিন পাওয়া যেতো না। এখন পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে কেবিন খালি যাচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘আগের থেকে যাত্রী কমলেও ভাড়া কমেনি। তার থেকে এসি বাসে কম সময়ে এখন ঢাকায় যাওয়া যায়। বর্তমানে ডেকের ভাড়া নেওয়া হয় ৫০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১৬০০ টাকা, ডাবল কেবিন তিন হাজার টাকা, ভিআইপি ছয় হাজার, ফ্যামিলি কেবিন চার হাজার টাকা। এর চেয়ে এসি বাসের ভাড়া অনেক কম। বরগুনা থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকায় যেতে বাস ভাড়া লাগছে ৭০০ টাকা।’

যাত্রীবাহী লঞ্চ রাজহংশ-৮

আরেক লঞ্চযাত্রী আকরাম হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর ফলে লঞ্চের যাত্রী অনেক কমেছে। তবে যাত্রীদের ধরে রাখতে লঞ্চ মালিকদের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। লঞ্চে যাত্রী ধরে রাখতে সেবার মান বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে ভাড়া কমাতে হবে। তা না হলে লঞ্চ মালিকদের বিপাকে পড়তে হবে।’

রাজারহাট-বি লঞ্চের সুপারভাইজার দুলাল মিয়া বলেন, ‘আগের থেকে যাত্রী কমেছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যে যাত্রী বাড়বে।’

লঞ্চ ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যাত্রী কমছে, জ্বালানির দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় খরচ বেশি হচ্ছে। এ জন্য লঞ্চ ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই।’

এমকে শিপিং লাইন্সের স্বত্বাধিকারী মাসুম খান বলেন, ‌‘পদ্মা সেতু চালুর ফলে সড়কপথে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। সেতু চালুর আগে লঞ্চে যে পরিমাণ যাত্রী হতো এখন কম হচ্ছে। যাত্রী আরও কমলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম সড়কপথে যাত্রীরা গেলেও ধীরে ধীরে আবারও লঞ্চমুখী হবেন। যাত্রীদের টানতে সেবার মান বাড়াবো আমরা। লঞ্চ মালিকদের নিয়ে বৈঠক হবে। সেখানে যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর কথা বলবো।’

Source link

Related posts

হিলি বন্দরে ১১ দিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

News Desk

কক্সবাজারের যে সৈকতে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ

News Desk

‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’র নাম বদলে ‘মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর’ করার দাবি

News Desk

Leave a Comment