ভারতের কাশ্মীরের শ্রীনগরের ডাল লেকে হাউজবোটে অগ্নিকাণ্ডে নিহত তিন বাংলাদেশির বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান ও মীরসরাই উপজেলায়। এর মধ্যে দুজন রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী। অপরজন ঠিকাদার। তাদের মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন স্বজনরা। পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।
স্থানীয় সময় শনিবার (১১ নভেম্বর) ভোর সোয়া ৫টার দিকে শ্রীনগরের ডাল লেকের ৯ নম্বর ঘাটের কাছে একটি হাউজবোটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে অন্তত পাঁচটি হাউজবোট পুড়ে গেছে। ওই সময় দগ্ধ হয়ে মারা যান তিন বাংলাদেশি। তারা চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন।
নিহতরা হলেন—রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল, একই বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইমন দাশগুপ্ত ও ঠিকাদার মাইনুদ্দিন। ৩০তম বিসিএসের এই ক্যাডার ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। তার বাড়ি মীরসরাই উপজেলায়। তিনি দুই সন্তানের জনক। সকালে তার মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে হাউজবোটে আগুন, ৩ বাংলাদেশি পর্যটকের মৃত্যু
ইমন দাশগুপ্তের বাড়ি রাউজান উপজেলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঢেউয়াপাড়ায়। তিনি ওই এলাকার অনিল মাস্টারের বাড়ির রাম কৃষ্ণ দাশের ছেলে। ৩৩তম বিসিএসের কর্মকর্তা ইমন ব্যক্তিজীবনে তিন বছর বয়সী এক ছেলেসন্তানের জনক। পরিবার নিয়ে থাকতেন পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায়। তার মৃত্যুর খবরে আশপাশের মানুষজন বাড়িতে ভিড় করেছেন। কাঁদছেন স্ত্রী-সন্তান। এ সময় তাদের সান্ত্বনা দিতে আসা প্রতিবেশীরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
ঠিকাদার মাইনুদ্দিনের বাড়ি রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নে। তিনি ওই ইউনিয়নের মোজাফফর হোসেন চৌধুরীর ছেলে। পরিবার নিয়ে থাকতেন নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাবা মোজাফফর হোসেন। নীরবে চোখের পানি ফেলছেন তিনি।
প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির জিসান। তিনি বলেন, ‘অনিন্দ্য আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলাম আমরা। আমাদের ব্যাচের একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে, সেখান থেকে তার মৃত্যু খবর পাই। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’
রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌকির হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনিন্দ্য কৌশল গত ৩ নভেম্বর ভারতে গিয়েছিলেন। ১ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি নিয়েছেন। ১৫ নভেম্বর থেকে অফিস করার ছিল। তার সঙ্গে ছিলেন ইমন দাশগুপ্ত ও ঠিকাদার মাইনুদ্দিন। তারা তীর্থ ভ্রমণের জন্য কাশ্মীরে গেছেন। তাদের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।’
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে অগ্নিকাণ্ডে মৃত ৩ বাংলাদেশির দুজন রাঙামাটি গণপূর্তের প্রকৌশলী
ঠিকাদার মাইনুদ্দিন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপ-কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিনের চাচাতো বোনের স্বামী। আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘৩ নভেম্বর মাইনুদ্দিন গণপূর্ত বিভাগের দুই প্রকৌশলীর সঙ্গে ভারতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে কাশ্মীরে ঘুরতে যান। শনিবার সকালে মৃত্যুর খবর পাই আমরা। তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। তারা অঝোরে কাঁদছে।’
রাউজান উপজেলার বিনাজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবীন্দ্র লাল চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও তাদের লাশ গ্রামের বাড়ি এসে পৌঁছায়নি। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি আমি।’