বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ অধ্যাদেশ ১৯৮৫ রহিত এবং তা যুগোপযোগী করে আইনে পরিণত করতে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজসম্পদ করপোরেশন আইন-২০২১ নামে এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ উঠছে। ফলে অধ্যাদেশের পরিবর্তে আইনের অধীনেই চলবে পেট্রোবাংলা। করপোরেশনকে বর্তমানের মতো সংক্ষেপে ‘পেট্রোবাংলা’

নামেই ডাকা হবে। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির অনুমোদিত মূলধন হবে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা, যা প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারই সরবরাহ করবে। সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১১ সালে সুপ্রিমকোর্টের এক রায়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সামরিক সরকারের জারি করা অধ্যাদেশগুলোর কার্যকারিতা লোপ পায়। ফলে সব অধ্যাদেশকে ধীরে ধীরে আইনে পরিণত করার পদক্ষেপ নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে এতদিন অধ্যাদেশে চলে আসা পেট্রোবাংলাকে আইনের অধীনে নিচ্ছে সরকার।

খসড়া আইন অনুযায়ী উপধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উপধারা (১) এ অনুমোদিত বা পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ পরিবর্তন এবং উৎস নির্ধারণ করতে পারবে সরকার। উপধারা (১) ও (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, করপোরেশন তার সকল বা যে কোনো কার্যসম্পাদনের উদ্দেশ্যে, সরকারের অনুমোদনক্রমে, দেশি বা বিদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো উৎস হতে ঋণ বা অনুদান নিয়ে পৃথকভাবে মূলধন বাড়াতে পারবে।

খসড়া অনুযায়ী একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সরকার করপোরেশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ করবে। বর্তমান অধ্যাদেশ অনুযায়ীও অতিরিক্ত সচিব চেয়ারম্যান পদে আছেন। তিনিই করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী। চেয়ারম্যান অন্য কোনো করপোরেশন, কোম্পানি বা ব্যবসায় কোনো পরিচালক পদে থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে।

পরিচালকদের বিষয়ে খসড়া আইনে বলা হয়েছে- জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা একজন করে পরিচালক মনোনয়ন দেবে। এসব পরিচালকের যোগ্যতা হবে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার। আর সরকারের নিয়োগকৃত অনধিক পরিচালক থাকবেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে তিনজন পরিচালক পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাগণের মধ্য থেকে নিযুক্ত হবে। সরকারের মনোনীত পরিচালক ছাড়া অন্য পরিচালকরা এবং চেয়ারম্যান করপোরেশনের সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা হবেন। মনোনীত পরিচালকদের মধ্য থেকে কমপক্ষে একজন পরিচালকসহ ন্যূনতম পাঁচ পরিচালকের উপস্থিতিতে পরিচালনা পর্ষদের সভার কোরাম গঠিত হবে। তবে মুলতবি সভার ক্ষেত্রে কোনো কোরামের প্রয়োজন হবে না। সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে পরিচালনা পর্ষদের সব সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। তবে ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকবে। কোনো পরিচালকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকলে তিনি ভোট দিতে পারবেন না। চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে তিনি পরিচালকের পদ হারাবেন।

প্রসঙ্গত ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশে দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ খনিজ, তেল ও গ্যাস করপোরেশন (বিএমওজিসি) গঠিত হয়। একই সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আরেক আদেশে দেশের খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন করপোরেশন’ (বিএমইডিসি) নামে অপর একটি সংস্থা গঠিত হয়। বাংলাদেশ খনিজ, তৈল ও গ্যাস করপোরেশনকে (বিএমওজিসি) বাংলাদেশ তৈল ও গ্যাস করপোরেশন (বিওজিসি) নামে পুনর্গঠন করা হয় এবং ১৯৭৪ সালের ২২ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশের বিওজিসিকে পেট্রোবাংলা নামে সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে অধ্যাদেশে অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১-কে বাতিল করে অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (ওজিডিসি) বিলুপ্ত করা হয় এবং তার সম্পদ ও দায় পেট্রোবাংলার ওপর ন্যস্ত করা হয়।

১৯৮৫ সালের ১১ এপ্রিল জারিকৃত এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিওজিসি ও বিএমইডিসিকে একীভূত করে বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (বিওজিএমসি) গঠন করা হয়। অতঃপর ওই অধ্যাদেশের আংশিক সংশোধনক্রমে ১৯৮৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত ১১নং আইনের মাধ্যমে এই করপোরেশনকে ‘পেট্রোবাংলা’ নামে সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয় এবং তৈল, গ্যাস ও খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত কোম্পানিসমূহের শেয়ার ধারণের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। অবশেষে ১৯৮৫ সালের সেই অধ্যাদেশ বাতিল করে পেট্রোবাংলাকে আইনের অধীনে নিচ্ছে সরকার। গেল কয়েক মাস আগে দেশে জারি থাকা সব অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

Related posts

বাংলাদেশকে টপকে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় ভিয়েতনাম

News Desk

জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বন্যার আশঙ্কা

News Desk

শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেল

News Desk

Leave a Comment