বান্দরবানের থানচির সাঙ্গুর চর থেকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ঠিকাদার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নেমেছেন বালু তোলার প্রতিযোগিতায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানচির বলিপাড়ার কানাজিওপাড়া, ঙাইক্ষ্যংপাড়া, মংনাইপাড়ায় মেম্বার উচনু, বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া অং ও ঠিকাদার আনোয়ার, বলিপাড়ার নাইন্দারীপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বাসিংঅং মারমা, আমতলীপাড়ায় যুবলীগের সভাপতি অনিল ত্রিপুরা, সম্পাদক চহাই মারমা, মালিরাম ত্রিপুরা ও ঠিকাদার সুজনসহ কয়েকজন এ বালু উত্তোলনে জড়িত। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতি রাতে তারা ট্রাকযোগে বিভিন্ন স্থানে এ বালু পাচার করে আসছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে, শুক্রবার (১৭ মে) রাত ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধভাবে সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলন করে পাচারের সময় বালুভর্তি একটি ট্রাক জব্দ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এ সময় ট্রাকচালক ও সহকারীকে আটক করলেও পরে শুধু ট্রাকটি জব্দ করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের মতে, থানচি সদর ইউনিয়নের খামার ঘাট থেকে নদীর বালু ক্রয় করে গত তিন মাস ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অনিল ত্রিপুরা ও সম্পাদক চহাইনু মারমা প্রায় কয়েক লাখ ঘনফুট বালু ইতোমধ্যে উত্তোলন করেছেন এবং প্রতি রাতে তা পাচার করছেন।
একাধিক বালু উত্তোলনকারী জানান, এ বালু ঠিকাদার আনোয়ার কক্সবাজারের চকরিয়ার ভাউচার ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর বাকলাই সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য পাঠান। তারা আরও জানান, আনোয়ার চকরিয়া থেকে যে বালু আনেন তার সঙ্গে এ বালু মিশিয়ে নিয়ে নিয়ে যান। তাদের দাবি, এমন কাজ করে আনোয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও প্রতারণা করছেন।
বালুর ট্রাক জব্দের বিষয়ে থানচি যুবলীগের সম্পাদক চহাইনু মারমা বলেন, ‘এলাকার কিছু অসহায় ছেলে আছে, তাদের আমরা সহযোগিতা করছি। আমরা নিজেরা কোনও বালু উত্তোলন করছি না।’
থানচি যুবলীগের সভাপতি অনিল ত্রিপুরা বলেন, ‘থানচির সবাই খুবই কষ্টে আছেন। তাই নিজেদের (সরকার দলের) ছেলেদের সহযোগিতা করছি।’ এ সময় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে বালু উত্তোলন না করলে এখানে সরকারি উন্নয়ন হবে কীভাবে?’
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘রাতে অবৈধভাবে পাচারের সময় বালুভর্তি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এ সময় দুজনকে আটক করা হলেও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জব্দ ট্রাক ও বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
এ বিষয়ে বান্দরবান পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘থানচির বালু উত্তোলনের ব্যাপারে আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’