অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার পর আর জ্ঞান ফেরেনি শিশুটির
বাংলাদেশ

অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার পর আর জ্ঞান ফেরেনি শিশুটির

কুমিল্লায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় ১৭ মাসের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার ওই হাসপাতালে গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে শিশুটি মারা গেছে।

রোগীর স্বজনদের দাবি চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাই হাসপাতালেও উত্তেজনা দেয়। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতের স্বজনদের ‘সান্ত্বনা’ দিতে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন শিশুর বাবা ও মা।

ওই শিশুর নাম নূর মোহাম্মদ (১৭ মাস)। সে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর পশ্চিম পাড়ার সবুজ মিয়া ও তানিয়া আক্তার দম্পতির সন্তান। 

জানা গেছে, শনিবার রাত ৮টা ৭ মিনিটে নূর মোহাম্মদকে ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে রেখে বের হন মা। এর প্রায় এক ঘণ্টার কিছু সময় পর তার মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আসেন শিশুর বাবা সবুজের মামা হেলাল উদ্দীন।

মা তানিয়া আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গত জানুয়ারি থেকে ডাক্তার দেবাশীষ চক্রবর্তীর কাছে সেবা নিচ্ছি। আমার ছেলের প্রস্রাবের রাস্তার নিচে ছিদ্র থাকায় নিয়মিত ওনার চেম্বারে সেবা নিতাম। উনি আমাদের সার্জারির পরামর্শ দেন। শনিবার আমরা ডাক্তারের পরামর্শে আল নূর হাসপাতালে আসি। তিনি জানিয়েছেন, রাতে ছেলের অপারেশন। আমরা ৭০ হাজার টাকা কন্ট্রাক্টের ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকি টাকা অপারেশনের পরে দেওয়ার কথা।’

তিনি বলেন, ‘তারা বলেছিল রাতে অপারেশন। তাই সন্ধ্যার পর বাচ্চাকে নিয়ে আমাকে অপারেশন থিয়েটারে আসতে বলে। তখন সাড়ে ৭টার মতো বাজে। বাচ্চা ঘুমাচ্ছিল। আমি ওকে কোলে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তার ঘুম ভেঙে যায়। চিৎকার করা অবস্থাতেই তাকে অপারেশন থিয়েটারে রাখতে যাই। বাচ্চাটা আমাকে ধরে চিৎকার করে কান্না করছিল। আমি তার হাতে ধরে মুছে দিলাম। কপালে চুমু দিলাম। সে তখনও কান্না করছিল। ডাক্তাররা এ সময় আমার ছেলের ক্যানোলার মধ্যে একটা ইনজেকশন পুশ করে। পরে সে আস্তে ঘুমিয়ে যায়।’

সন্তান হারানো এই মা আরও বলেন, ‘ডাক্তার বলেছে সে অজ্ঞান হয়েছে। তাই আমাকেও সবাই বলে চলে আসতে। বাইরে এসে দেখি তখন ৮ টা ৭। আমি ওখানে দাঁড়িয়ে। ৯টার কিছু পরে আমাদের যিনি হাসপাতালে আনলেন সম্পর্কে মামা হন, নাম হেলাল। তিনি এসে বললেন আমাদের বাচ্চার জ্ঞান ফিরছে না। আমরা কান্না শুরু করলে তারা আমাদের জোর করে রেখে আসেন রুমে। কিছুক্ষণ পর তিনি এসে জানান ছেলে মারা গেছে। আমার সুস্থ ছেলেটাকে তারা মেরে ফেলে, রাত ১২টা পর্যন্ত আমাকে দেখতে দেয়নি। ১২টায় আমরা জোর করে রুমে ঢুকে আমার সন্তানকে দেখতে হয়েছে। তারা বলেছে অপারেশনের শেষের দিকে মারা গেছে। আমি তার লাশ ধোয়ার সময় দেখেছি আমার ছেলের শুধু চামড়াটা কাটা ছিল। তার শরীরে রক্ত ছিল। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’

কোনও অভিযোগ করবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অভিযোগের চিন্তা এখনও মাথায় নেই। আমরা প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।

অপারেশনে অ্যানেস্থেসিয়ার চিকিৎসক মো. ফখরুল আজম বলেন, অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আমরা অপারেশন শুরু করি। কিন্তু এর মাঝেই তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (হৃদপিণ্ড হঠাৎ শরীরে রক্ত সরবরাহ করা বন্ধ করে দেয়) হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সব ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেও তাকে আর ফেরাতে পারিনি। সব কিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু আচমকা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়াতে রোগীর আর জ্ঞান ফেরেনি।

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, বিষয়টি মুখে মুখে শুনেছি। কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Source link

Related posts

গাছে গাছে পাখিদের ‘নিরাপদ নীড়’

News Desk

‘৫ কিমি গাড়ির সারি, কখন ফেরির দেখা পাবো জানি না’

News Desk

শখের বসে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সফল সবুজ

News Desk

Leave a Comment