Image default
বাংলাদেশ

সৈকতে ভেসে আসছে মৃত রাজকাঁকড়া

আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু এই বিশেষ দিনটিতে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে মৃত অবস্থায় ভেসে আসতে দেখা গেছে ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ নামে পরিচিত নীল রক্তের মূল্যবান সামুদ্রিক প্রাণী রাজকাঁকড়াকে। জেলার বাঁকখালী নদীর মোহনাসহ সমুদ্র উপকূলের কয়েকটি পয়েন্টে সেগুলো ভেসে এসেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মোহনায় ও উপকূলে বেশ কিছু রাজকাকড়া মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি জীবিত রয়েছে। পড়ে থাকা এসব রাজকাঁকড়াকে কুকুর ও কাকসহ অন্যান্য প্রাণী খাচ্ছে। উপকূলের ৫০ গজের মধ্যে অন্তত ১৫ থেকে ২০টিরও বেশি রাজকাঁকড়াকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সমুদ্র গবেষক ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের ঔষধি গুণ সম্পন্ন নীল রক্তের এই সামুদ্রিক প্রাণী অত্যন্ত মূল্যবান। হয়তো সাগরে জেলেদের জালে আটকে বা অন্য কোনও কারণে মারা যেতে পারে। সাগর দূষিত হলেও এই প্রাণী মারা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘রাজকাঁকড়া বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সামুদ্রিক প্রাণী। সাগরের সবখানে তাদের বিচরণ দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সাগরে জেলেদের অসচেতনতা ও অসাবধানতার কারণে জালে আটকে পড়ে অনেক রাজকাঁকড়া মারা যাচ্ছে। আবার দূষণ হলেও মারা যেতে পারে। তবে এসব কাঁকড়া কী কারণে মারা গেছে তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। অথচ এই সামুদ্রিক প্রাণী নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গবেষণার মাধ্যমে দেশের সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন বিজ্ঞানীরা। রক্তের ঔষধি গুণের কারণে রাজকাঁকড়া প্রাণীটি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বে ছয়-সাত দশক আগে গবেষণা শুরু হয়েছে।’

আরও খবর:  দেশে প্রথমবার রাজকাঁকড়া নিয়ে গবেষণা, রক্তের গ্যালন ৫০ লাখ টাকা

কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সামুদ্রিক প্রাণী রাজকাঁকড়ার নীল রক্ত অনেক মূল্যবান মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ড্রাস্টিতে। ঔষধি গুণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা ব্যাপক। এ কারণে কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে এ বছর গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে।’

কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাকিয়া হাসান বলেন, ‘সমুদ্রের সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগাতে নতুন নতুন গবেষণা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা সফলও হয়েছি। তাই, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত।’

সমুদ্র গবেষক ও সাংবাদিক আহমদ গিয়াস বলেন, ‘আমাদের বঙ্গোপসাগরের একমাত্র লিভিংফসিল বা জীবন্তজীবাস্ম হলো হর্সশো ক্র্যাব বা রাজকাঁকড়া। যেটি স্থানীয়ভাবে “দিও কিঁয়ারা” নামে পরিচিত। প্রকৃতির নানা ভাঙাগড়া ও দুর্যোগের মধ্যেও প্রায় ৫০ কোটি বছর ধরে প্রায় অবিকৃতভাবে টিকে আছে এ প্রাণীটি। নীল রক্তের এ প্রাণীটির রক্ত জাদুকরি ঔষধি গুণ সম্পন্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত শতাব্দীর ৫০-এর দশক থেকে বা আজ থেকে অন্তত ৭০ বছর আগেই এ প্রাণীটির ঔষধি গুণ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ’৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ ঔষধি কাজে প্রাণীটির রক্তের ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।’

তিনি আরও জানান, ঔষধি গুণের কারণে সামুদ্রিক রাজকাঁকড়ার রক্তের দাম বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা। এই সামুদ্রিক প্রাণীটি নীল রক্ত চিকিৎসাশাস্ত্রে এনেছে জাদুকরি পরিবর্তন। মানুষের শরীরের দ্রুত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এবং মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে রাজকাঁকড়ার নীল রক্ত অতুলনীয়। এ ছাড়াও রাজকাঁকড়ার শরীরের পেছনে থাকা ছোট্ট লেজটি দিয়ে তৈরি করা হয় ক্যানসারের ওষুধ। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে একেকটি রাজকাঁকড়ার দাম অনেক বেশি।

এদিকে, আজ ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ রোধ ও সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক পালিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের উন্নয়নশীল অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।  পাশাপাশি নানা কারণে বেড়েছে সাগর দূষণ।

Source link

Related posts

‘ফোনালাপ ফাঁস’ নিয়ে যা বললেন আইনমন্ত্রী

News Desk

আখাউড়ায় বাঁধ ভেঙে ১৫ গ্রাম প্লাবিত

News Desk

পরকীয়ার জেরে ঔষুধ কোম্পানীর কর্মকর্তাকে গলাকেটে হত্যা

News Desk

Leave a Comment