Image default
জানা অজানা

দ্রুত ইংরেজিতে কথা বলার সহজ উপায়

বর্তমান যুগটাই এমন, যেখানে ইংরেজি ছাড়া কোনো কিছু চিন্তাও করা যায় না। কি পড়াশোনা, কি চাকরি—সব জায়গায়ই ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা এখন মুখ্য বিষয়, বিশেষ করে ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা। বহুজাতিক কোম্পানিতে ভালো চাকরি পেতে গেলে ভালো ইংরেজি বলতে পারার কোনো বিকল্প নেই। সব রকম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় শুধু ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা না বলতে পারার কারণে অনেকেরই চাকরি হয় না। কিন্তু এই ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে কত বিপত্তি। মনের মধ্যে উঁকি দেয় কত ভয়। মনে হয়, আপনি সব ভুলভাল বলে বসবেন, আটকে যাবেন। সবাই আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। এভাবে আর বলা হয়ে ওঠে না। মনের কথা মনেই থেকে যায়।

তো এই ইংরেজিতে “খুব ভাল” আমার, খুব চমৎকার ইংরেজি বলার কথা, তাই না? দেশের নামকরা স্কুল-কলেজে, সবচেয়ে ভাল ইংরেজি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে পড়ে, আমি একটুও না আটকে অনর্গল ইংরেজি বলে যাবো, এটাই তো হবার কথা। কিন্তু বাস্তবে কিন্তু তা হয় না।

পরীক্ষার খাতায় হাইয়েস্ট মার্কস পাওয়ার মতো ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্ট হওয়ার পথ কিন্তু এতোটা মসৃণ ছিল না। কারণটা খুব সহজ। আমরা যারা বাংলা মিডিয়ামে পড়ি, তারা গ্রামার, ভোকাবুলারিতে খুব ভাল হলেও; যখন ইংরেজিতে কথা বলতে হয়, তখনই আটকে যাই। মাথায় সবকিছু খুব সুন্দর গুছিয়ে রাখা, লিখতে দিলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যেতে পারবো। কিন্তু বলতে গেলেই, মাথাটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মুখ খুললে হয়তো আওয়াজই বের হচ্ছে না।

তো এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার বা ইংরেজি শেখার সহজ উপায় ছিল, কারো সাথে ইংরেজিতে কথা বলা প্র্যাকটিস করা। যদি সে নিজে ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্ট হয়, তাহলে তো খুব ভাল। না হলেও ক্ষতি নেই। চর্চা করাটাই আসল।

কিন্তু, “ইংরেজিতে আমি খুব ভাল” এই ধারণা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ায় আমি কারো কাছে সাহায্য চাইলাম না। আমি ঠিক করলাম আমি একা একাই ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলায় পারদর্শী হব এবং হলামও। কীভাবে ইংরেজি শিখলাম সেই উপায়গুলো নিয়েই আজকের আয়োজন।

১। চিন্তাটা ইংরেজিতে করতে হবে:

আমরা ইংরেজিতে যখন কথা বলি, তখন আগে কী বলব তা বাংলায় ভেবে নেই। তারপর সেটা মনে মনেই ইংরেজিতে অনুবাদ করি এবং তারপর ইংরেজিতে বলি। এর ফলে বারবার বাংলা এবং ইংরেজিতে আমাদের আসা-যাওয়া চলতে থাকে। যে কারণে, কথায় ফ্লুয়েন্সি থাকে না।

তাই, আমাদের চিন্তাটাও ইংরেজিতেই করতে হবে। শুধুমাত্র কথা বলার সময় না। যেকোন সময়ই। যখনই আমরা নিজের মনে কিছু চিন্তা করবো, চেষ্টা করতে হবে সেই চিন্তাও যাতে ইংরেজিতে হয়।

২। একা একা কথা বলা:

যদি ইংরেজিতে চিন্তা করার অভ্যাসটি রপ্ত করে ফেলতে পারো, তাহলে আশে পাশে যখন কেউ নেই; সেই চিন্তাগুলোই নিজেকে নিজে বলে ফেলো। নিজের কানে যখন নিজের কথা শুনতে পাবে, নিজের ভুলগুলোও নিজেই ধরতে পারবে। এবং প্রতিবার প্র্যাকটিসের সময় বুঝতে পারবে যে, আগের চেয়ে ফ্লুয়েন্সি কতটা বাড়লো।

৩। গ্রামার নিয়ে বেশি চিন্তা না করা:

ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় গ্রামার নিয়ে। দেখা যায়, গ্রামার নিয়ে এমনিতে কোন সমস্যা নেই। নির্ভুল গ্রামারে লিখে যেতে পারছি। কিন্তু বলতে গেলেই গ্রামারে টুকটাক ভুল হয়েই যাচ্ছে। এবং তখনই আমরা থেমে যাচ্ছি।

এ কারণেই, প্র্যাকটিসের সময় গ্রামার নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো যাবে না। ভুল হচ্ছে? হোক! কথা বলা থামানো যাবে না। গ্রামারের ভুলগুলো যতদিন যাবে কমে আসবে। কিন্তু, গ্রামারের কথা ভেবে যদি বলা থামিয়ে দেই, তবে ফ্লুয়েন্সি কখনোই আসবে না।

৪। প্রচুর ইংরেজি শোনা:

আমি যত না ইংরেজি বই পড়ে শিখেছি, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি শিখেছি ইংরেজি মুভি আর সিরিজ দেখে। টিভি সিরিজ এবং মুভি শুধু আমার ইংরেজি শব্দভাণ্ডারই বাড়ায় নি, বরং ইংরেজিতে কথা বলাও সহজ করেছে। এবং এই সিরিজ বা মুভি দেখতে গিয়েই আমি বুঝলাম ইংরেজির কিছু আলাদা শব্দ থাকে। সেগুলোর বাংলা অর্থ করলে দেখা যাবে কিছুই বুঝা যাবে না। সেগুলো যত না শব্দ বা বাক্য, তার চেয়ে বেশি এক্সপ্রেশন। এবং ইংরেজিতে কথা বলার সময় এই এক্সপ্রেশনগুলোর ব্যবহার আমাদের কথাকে আরো শ্রুতিমধুর করে তোলে। তাই, প্রচুর ইংরেজি সিরিজ আর মুভি দেখতে হবে।

৫। ইংরেজি গান গাওয়া:

এই কাজটা আমি খুব করতাম। আমি প্রচুর গান শুনতাম এবং সেই গানগুলো গাওয়ার চেষ্টা করতাম। শুনতে তা যত বেসুরোই হোক না কেন!

এর সুবিধাটা হচ্ছে, সুরে সুরে গান গেয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ইংরেজি বলার প্র্যাকটিসটাও হচ্ছে। আবার এই সুর তালের কারণেই আমাদের খুব একটা ভেবেও গাইতে হচ্ছে না। যার ফলে না থেমে ইংরেজি উচ্চারণটা সহজ হচ্ছে।

৬। ইংরেজিতে গল্প বলা:

তোমার সবচেয়ে প্রিয় গল্পটি কাউকে ইংরেজিতে শোনাও। এটা নিজেকে পরীক্ষা করার খুব ভাল একটা উপায়। যে গল্পটা আমরা খুব ভাল জানি, তা বলতে গেলে আমাদের খুব একটা ভাবতে হয় না। অনর্গল বলে যেতে পারি। সেই গল্পটাই ইংরেজিতে আমরা ঠিক কতটা ভাল বলতে পারছি, সেটা বুঝলেই নিজের অবস্থা সম্পর্কে খুব ভাল একটা ধারণা হয়ে যায়।

৭। যেকোন শব্দের অন্যান্য রূপ সম্পর্কে জানা:

যেকোন শব্দের বেশকিছু রূপ থাকে। এবং একই শব্দের অনেক রকম ব্যবহার হতে পারে। খুব সহজ কোন উদাহরণ যদি দেই, ইংরেজি “get” শব্দের মানে পাওয়াও হতে পারে। আবার বুঝতে পারা অর্থেও এটা ব্যবহার করা হয়। এরকম বেশ কিছু শব্দ আছে, যার অনেক রকম মানে দাঁড়ায়। শুধু তাই না, একই শব্দ বাক্যভেদে ভিন্ন অর্থ বহন করে ।

other ways to say happy
তাই, শব্দের এই ভিন্ন ভিন্ন রূপ জানতে হবে। এবং সেইসাথে ব্যবহারও করতে হবে।

৮। শুধু শব্দ না, Phrase শেখা:

ইংরেজি যাদের ফার্স্ট ল্যাংগুয়েজ তাদের সাথে অন্যদের পার্থক্য শুধু ফ্লুয়েন্সিতে না। বরং শব্দচয়ন এবং কথার ধরণেও। একদম সঠিক গ্রামার আর ভোক্যাবুলারি ব্যবহার করে কথা বললেও দেখা যায়, একজন স্থানীয়ের সাথে কিছুটা পার্থক্য থেকেই যায়।

সব ভয় বা লজ্জা কাটিয়ে উঠে আমাদের কথা বলতে হবে

যেমন আমরা হয়তো কেউ কেমন আছে জানতে চাইব, “How are you” বলে। সেই একই কথা একজন স্থানীয় হয়তো জানতে চাইবে “What’s up” বলে।
তাই, শব্দ শেখার চেয়েও বেশি উপকারী হচ্ছে, Phrase বা Expression শেখা।

৯। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা:

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললে যা হবে, আমরা ইংরেজি বলার সময় আমাদের বাচনভঙ্গিও দেখতে পাবো। অধিকাংশ সময় যেটা হয়, আমরা ইংরেজিতে কথা বলার সময় আমাদের ভুল নিয়ে এতটাই সচেতন থাকি যে আমাদের আচরণে সেটা ফুটে উঠে। যখন আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করবো, তখন নিজেদের এই ভুল বুঝতে পারবো। এবং নিজেদের আড়ষ্টতা কাটানোর জন্য কাজ করবো।

১০। সংকোচ কাটিয়ে তোলা:

একা একা বেশ কিছুদিন প্র্যাকটিস করার পর আমাদের মনে হতে পারে যে, এখন আমরা অন্যদের সামনেও একইভাবে না আটকে ইংরেজিতে কথা বলে যেতে পারবো। কিন্তু আসলেই যখন সময় আসে অন্যের সামনে বলার তখন পারি না। প্রশ্নটি হচ্ছে, কেন?

কারণ আমাদের কাছে মনে হয়, যদি কোন ভুল হয় তাহলে সামনের মানুষটার সামনে আমাকে লজ্জায় পড়তে হবে। আমাদের কোন ভুল কেউ ধরুক, খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা তা চাই না । কিন্তু, এই ভয় বা লজ্জাটাই আমাদের অনেকখানি পিছিয়ে দেয়। তাই, সব ভয় বা লজ্জা কাটিয়ে উঠে আমাদের বলতে হবে। প্রয়োজনে ধীরে বলবো। পরের বাক্যটা বলার আগে একটু চিন্তা করে নিবো। কিন্তু বলবো। যদি ভুল হয়েও যায়, থামা যাবে না। আবার শুরু করতে হবে।

ইংরেজি বলার পিছনে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে কাজ করে আমাদের এই সংকোচ। তাই, যাই হোক না কেন, আমাদের এই সংকোচ কাটিয়ে উঠতে হবে।

Related posts

নিজের মুখটাকে খুঁজছে মানুষ

News Desk

মানবিক/আর্টস নিয়ে পড়লে কী হওয়া যায়?

News Desk

ইংরেজিতে প্রশ্ন করার সহজ নিয়ম

News Desk

Leave a Comment