Image default
জানা অজানা

মহাপ্রলয়ে ধ্বংস হতে পারে হিমালয়! কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?

গত কয়েক মাসে একাধিক ছোটখাটো ভূমিকম্পের সাক্ষী থেকেছে উত্তর ভারত। এগুলো কি নেহাতই মামুলি ঘটনা? বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, বড়সড় বিপর্যয় আসন্ন। কীসের ভিত্তিতে এমন সতর্কবার্তা?

সেলুলয়েডের পর্দায় আমরা পৃথিবীর ধ্বংস অনেক বার দেখেছি। সেই ভয় মাখা মুখগুলো দেখে শিউরে ওঠা আমাদের বিনোদনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবে হলে কেমন হয় অবস্থাটা? এর সামান্য আঁচ কোভিড আমাদের দিয়ে গেছে। সামান্য বলছি কারণ, এক নতুন ঘনিয়ে আসা বিপর্যয়ের কাছে এই মহামারি তো চুনোপুঁটি। করোনা আমাদের সেরে ওঠার সুযোগ দেয়। কিন্তু যদি পায়ের তলার মাটিটা হঠাৎ প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে, ধ্বংসস্তূপ হয়ে যায় রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি, চারিদিকে ছড়িয়ে মৃত মানুষের পিষে যাওয়া দেহ, সাথে স্বজনহারানোর হাহাকার… গল্প মনে হচ্ছে? কিন্তু তাবড় ভূকম্পবিজ্ঞানী এবং ভূতত্ত্ববিজ্ঞানীদের গবেষণা রিপোর্ট আগত বিপদ নিয়ে এই কথাই বলছে।

ভয় পেলেন? তাহলে আরও একটা খবর দিই। এই চূড়ান্ত ধ্বংসযজ্ঞের পটভূমি আমাদেরই উত্তরে দাঁড়িয়ে থাকা হিমালয় এবং তার আশেপাশের এলাকা। যার মধ্যে রয়েছে চণ্ডীগড়, দেরাদুন, কাঠমান্ডুর মত বড় শহরগুলো। বিপদ আছে আরও কিছুটা দক্ষিণে থাকা রাজধানী দিল্লিরও। আমেরিকার নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর নিওটেকটনিক স্টাডিজের ডিরেক্টর ওয়েসনোউস্কির কথায় এমনই অশনি সংকেত। তিনি আরও বলেছেন, এই বিপর্যয় আমাদের জীবনকালের মধ্যে ঘটে গেলেও তাতে অবাক হবার কিছু নেই, কারণ গবেষণা সময়কাল হিসেবে এই শতাব্দীকেই নির্দেশ করছে। এর ইঙ্গিত কিন্তু মাঝে মাঝেই দিয়ে চলেছে প্রকৃতি। উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মাস চারেক ধরে একাধিকবার মৃদু ভূকম্প অনুভূত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় তা খবরে না এলেও কপালে ভাঁজ ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। বছর তিনেক আগে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল হিমালয়ের কোলের ছোট্ট দেশ নেপাল। মারা গিয়েছিলেন প্রায় ৯০ হাজার মানুষ। দেশের অর্থনীতি থেকে শুরু করে যাবতীয় ঐতিহাসিক স্থাপত্য কার্যত গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। আবারও তেমনই এক মহাপ্রলয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে নেপালে কম্পনের মাত্রা ছিল ৮.১। এবারে তা আরও ভয়াবহ হতে পারে, যার কম্পনের মাত্রা হতে পারে ৮.৫ পর্যন্ত। আরও বিপদের কথা, এবারের ভূমিকম্পটি হতে পারে খাস হিমালয় পর্বতমালার কেন্দ্রস্থলে। যার ভয়াবহতা কতটা, কী পরিমাণ ধ্বংসলীলা চলতে পারে এর ফলে তা আন্দাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বিজ্ঞানীদের তরফেও।

হিমালয়ের বিভিন্ন এলাকায় দাবানল আর অসময়ের বন্যা, অতিরিক্ত তুষারপাত বারবার ফেউ ডেকে চলেছে কোন বড় অঘটনের। গ্রেট হিমালয়ান আর্থকোয়েক বলে যাকে বিজ্ঞানীরা অভিহিত করছেন তা এই ছোট কম্পনগুলোর থেকে ঠিক কতটা সময় দূরে, তা এখনও কারো জানা নেই। ভূমিকম্প সৃষ্টির কারণের থেকে এখনও অনেক দূরে আধুনিক বিজ্ঞান। ভরসা শুধু আগে হয়ে যাওয়া এলাকাভিত্তিক ভূমিকম্পের রিপোর্টের সাথে এলাকার ভুতাত্ত্বিক গঠনের তুল্যমূল্য আন্দাজের উপর। আর হিমালয় সংলগ্ন এলাকার পরিসংখ্যান এই অপ্রিয় সত্যকেই সামনে এনে দিচ্ছে। ঠেলে দিচ্ছে মানুষের ইতিহাসে না দেখা, এক অজানা ধ্বংসলীলার সামনে।

প্রায় ২২০০ কিমি জুড়ে ভারতীয় পাত ইউরেশীয় পাতের তলায় ঢুকে যাওয়ার গতিতে এসেছে পরিবর্তন। এই পাতের সঞ্চালনই হিমালয় সৃষ্টির কারণ। সাথে অরুণাচল থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীর অবধি এলাকাকে অধিক ভূমিকম্পপ্রবণ করে তোলার পিছনেও এই মহাদেশীয় পাত দুটির অনিয়মিত চলাফেরাই দায়ী। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ইউরেশীয় পাতের উপর বিশাল উচ্চচাপ রিখটার স্কেলে অন্তত আট বা তারও বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রবণতা তৈরি করেছে বলে জানালেন সিসমোলজিস্ট সুপ্রিয় মিত্র। জুরিখের ইটিএইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে দু’টি টেকটনিক প্লেট যত দ্রুত পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে সেই এলাকার উষ্ণতার হ্রাস এবং ভূমিকম্পের বিস্তৃতি ততটাই বেশি এবং ভয়ঙ্কর হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লুকা দাল জিলিও জানিয়েছেন এই পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায়। যে সমস্ত মৃদু কম্পনগুলোকে সেই বিপর্যয়ের পূর্বাভাস বলে ধরা হচ্ছে, সেগুলোর থেকে নাকি প্রায় হাজার গুণ শক্তিশালী প্রকৃত ভূমিকম্পটি!

তাই এখন সময় সাবধান হওয়ার। যদিও এই অদৃশ্য বিপদের থেকে সাবধান কী ভাবে হতে হবে, তার হদিশ নেই গবেষকদের কাছে। তাই ২০১৫ ,সালে নেপালের বা ২০১৩ তে উত্তরাখণ্ডের ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলার স্মৃতির দিকে তাকিয়ে শুধুই শিহরণের প্রহর গোনা। প্রকৃতির রোষ কবে যে নেমে আসবে আর কার কপালেই বা আঁকা আছে পরিত্রাণের বিজয়তিলক, তার উত্তর শুধু প্রকৃতিই জানে।

Related posts

অধিকাংশ জলদস্যুদের একটি চোখ বন্ধ করে রাখা থাকে কেন?

News Desk

সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া নিষিদ্ধ কেন?

Sanjibon Das

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: ইতিহাস, অর্থ এবং আচার-অনুষ্ঠান

Sanjibon Das

Leave a Comment