আচ্ছা পুরোনো গাছ বলতে আপনার কী মনে পড়ে? শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের সেই বটগাছটি যার বয়স ছিল প্রায় কলকাতা শহরেরই সমান। লোকমুখে প্রচারিত ছিল যে গাছের বয়স নাকি ছিল হাজার হাজার বছর। যদিও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের দাবি গাছের বয়স প্রায় তিনশো বছর। বট গাছটির পোশাকী নাম ‘দ্য গ্রেট ব্যানিয়ন ট্রি’। ১৯২৫ সালের সাইক্লোনের গাছের প্রধান গুঁড়ি উপড়ে গেলেও বছরের পর বছর ধরে সে গাছ তার শাখা বিস্তার করে চলেছে। গত বছরের আমফান ঝড়েও গাছের অনেকটা ক্ষতি হয়। যদিও সে সব সামলে উত্তরসূরী শাখাগুলি দিব্য হাওয়ায় তার পাতা কাঁপিয়ে চলেছে। কলকাতায় এলে অনেক দেশি বিদেশি পর্যটক একবার অন্তত ‘দ্য গ্রেট ব্যানিয়ন ট্রি’র দর্শন করে যান। স্থানীয় গাইডরা গর্ব করে বলেন, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন গাছ এটি। লোকে অবাক হয়ে তা বিশ্বাসও করে।
![দ্য গ্রেট ব্যানিয়ন ট্রি](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/shutterstock-607030112-1024x683.jpg)
এরকমই কলকাতা বেড়াতে এসেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার জ্যাকব জনসন। বছর ২৫-এর এই যুবক ‘দ্য গ্রেট ব্যানিয়র ট্রি’র বয়স শুনে হেসে ফেলেছিলেন। সকলে তাতে বিরক্ত হলে জ্যাকব ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেন, বাংলার বটগাছ মাত্র তিনশো বছর ধরে পৃথিবী দেখছে। আর তাঁদের দেশে বৃদ্ধা পাইন গাছ গত প্রায় ৫ হাজার বছর ধরে এই ধরাধামের বাসিন্দা।
পুরানো সেই গাছের কথা
আজ্ঞে হ্যাঁ, পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার নেভাদার গ্রেট বেসিন ন্যাশনাল পার্কের অতিবৃদ্ধা পাইন গাছের বয়স ৪ হাজার ৮০০ বছরেরও বেশি। আর এই গাছকে ঘিরেই রয়েছে নানা রহস্য। এই গাছকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য গ্রেট বেসিন ব্রিসলকোন’। এটি পাইন প্রজাতির গাছ। বিজ্ঞানীর অনুমান এটিই বিশ্বের প্রাচীনতম উদ্ভিদ। আর শুধুমাত্র এই রহস্যময় গাছটিকে একবার চোখের দেখা দেখতেই হাজার হাজার পর্যটক ক্যালিফোর্নিয়ায় যান। অন্তত সে দেশের সরকারি তথ্য এমনই দাবি করে।
রহস্য শুধুই রহস্য
গাছের আকারাটি বড় রহস্যময়। হঠাৎ দেখলে মনে হয় রূপকথার কোনও বুড়ি ডাইনি বুঝি আপনার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রথম দর্শনে অনেকে অস্বস্তি বোধ করে থাকেন। ক্রমশ তা চোখ সওয়া হয়ে যায়। গাছে কোনও পাতা নেই। দেখলে মনে হয় সারা শরীরে জরা নিয়ে বুড়ি বছরের পর বছর জাতীয় উদ্যানটি পাহারা দিচ্ছে। বাইরের লোককে প্রকৃতি ধ্বংস করতে দেখলেই জাদু কাঠির সাহায্যে তাঁকে বেড়াল কিংবা খরগোশ বানিয়ে দেবে।
![দ্য গ্রেট ব্যানিয়ন](https://www.bangladiary.com/wp-content/uploads/2021/04/shutterstock-294026945-1024x683.jpg)
শুধু অতিলৌকিক নয়, রহস্যের কথা শিকার করেন বিজ্ঞানীরাও। তাঁদের কথায়, খরা, অতিরিক্ত ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি বাদলা সামলিয়ে রহস্যজনক ভাবেই বেঁচে আছে এই গাছ। আর বাতাসের গতির সঙ্গে সঙ্গে নিজের শরীরের আকৃতিও পরিবর্তন করেছে সে। অর্থাত্ যেদিকে বাতাস বয় প্রাচীন বৃক্ষের শরীরের ভাঁজও সেদিকে পড়ে। আর এই কারণেই নাকি গাছটির বৃদ্ধি হয়ে চলে অতি ধীর গতিতে। বছরের পর বছর এভাবে চলতে চলতে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেয় ‘দ্য গ্রেট বেসিন ব্রিসলকোন’। পাইন প্রজাতির গাছ হওয়া সত্ত্বেও এর কাণ্ড প্রচণ্ড শক্ত এবং গভীর। এর ফলে ছত্রাক, পচন কিংবা ক্ষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে এই বৃদ্ধা।
আরও একটি রহস্য
অবশ্য শুধু নেভাদাই নয়। ক্যালিফোর্নিয়ার পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত ইনয়ো ন্যাশনাল পার্কেও প্রায় পাঁচ হাজার বয়সী একটি গাছ রয়েছে। সেই গাছও পাইন প্রজাতির। অনেক বিজ্ঞানীর মতে এই গাছগুলি আসলে মৃত। প্রাণ হারালেও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে পারেনি তারা। তাই জরাগ্রস্ত শরীরটাকে জঙ্গলে ফেলে রেখে গেছে।
লোকমুখে নানা প্রচার
অতিপ্রাচীন এই গাছকে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা বিশ্বাসের কথা শোনা যায়। বিজ্ঞান যাই বলুক না কেন তাঁদের বিশ্বাস নানা গল্প বলে বেড়ায়। স্থানীয় গাইডদের মুখে সেসব অলৌকিক কথা শোনা যায়। যার কিছুটা কল্পনা আর অনেকটাই অতিররঞ্জিত।
তথ্য সূত্র: ওয়ার্ল্ড এটলাস, এইসময় ইন্ডিয়া টাইমস।