Image default
জানা অজানা

৮০০ বাচ্চা দিয়ে অবসরে ‘ভিকি ডোনার’

‘ভিকি ডোনার’ শুনলেই কী মনে হয়? আয়ুষ্মান খুরানার নিতান্ত গোবেচারা মুখটা ভেসে ওঠে তো? কিন্তু সে তো রিল লাইফের। আমি যদি বলি, রিয়েল লাইফের ‘ভিকি ডোনার’কে দেখতে এক্কেবারে অন্যরকম! বিশালাকার চেহারা তার, লম্বা-উঁচু গলার চামড়া বুড়ি দিদিমা-ঠাকুমাদের মতো কোঁচকানো, মোটা মোটা পা বাড়িয়ে খুব ঢিমে তালে হাঁটে সে আর আলস্য লাগলেই খোলসের পেটে সেঁদিয়ে ঘুম! কি, বিশ্বাস হচ্ছে না তো? বেশ আসুন, আজ তবে আপনাদের ইকুয়েডরের রিয়েল লাইফ ভিকি ডোনারের গল্প শোনাই।

সে বছর পঞ্চাশ আগের কথা। ইকুয়েডরের এসপানোলা দ্বীপে তখন চেলোনোইডিস হুডেনসিস প্রজাতির কচ্ছপের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ১৪তে! ১২টা মেয়ে আর দু’টো ছেলে কচ্ছপ। সংখ্যা না বাড়ালে কুলরক্ষা হবে না। এ দিকে এই ১২টিও এমন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে যে সঙ্গম ঘটিয়ে বংশবৃদ্ধি সম্ভব নয়। এমনিতেই ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১৫ প্রজাতির কচ্ছপের দু’টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। তবে কি গালাপাগোসের দৈত্যাকার কচ্ছপও এক্কেবারে নির্বংশ হবে? চিন্তায় পরিবেশবিদদের রাতের ঘুম উড়েছে। এমন সময় খোঁজ পাওয়া গেল মুশকিল আসানের। সান দিয়েগোর চিড়িয়াখানায় রয়েছেন তিনি, বয়স পঞ্চাশের ধারেকাছে হলেও যৌনতার পারফরম্যান্সে সদ্যযুবাদের বলে বলে গোল দেন। আর দেবে নাই বা কেন, নামটাও যে তেমনই— দিয়েগো!

ষাটের দশকের মাঝামাঝি সান্তা ক্রুজ দ্বীপের গালাপাগোস ন্যাশনাল পার্কে শুরু হল চেলোনোইডিস হুডেনসিস প্রজাতির কচ্ছপের প্রজনন প্রকল্প, আর তার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো চিড়িয়াখানা থেকে আনা হল দিয়েগোকে। ব্যস, ময়দানে নামতেই বাজিমাত। এখন সেই পার্কে চেলোনোইডিস হুডেনসিস প্রজাতির কচ্ছপের সংখ্যা ২,০০০-এরও বেশি, আর তার ৪০ শতাংশেরই পিতৃত্ব দিয়েগোর! ‘ভিকি ডোনারে’র এই পারফরম্যান্সে বেজায় খুশি পরিবেশবিদরা। এখন তাঁরা হিসেব কষে দেখেছেন, বন্দি অবস্থায় কৃত্রিম প্রজননের আর কোনও প্রয়োজন নেই। এখন চেলোনোইডিস হুডেনসিস প্রজাতির সংখ্যা যা, তাতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের বংশবৃদ্ধি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পক্ষে যথেষ্ট।

এদিকে, বংশের অস্তিত্বরক্ষার কাজটা যিনি করলেন, সেই দিয়েগোর বয়সও ১০০ পেরিয়েছে। বয়স বাড়লেও চেহারাটা কিন্তু এখনও নজরকাড়া। ৮০ কেজি ওজন, ৯০ সেন্টিমিটার (৩৫ ইঞ্চি) লম্বা, পা আর গলাটা টানটান করলে লম্বায় প্রায় ১.৫ মিটার (পাঁচ ফুট)! এ হেন সুদেহী পুরুষের প্রেমে কে না পড়তে চায়! কিন্তু ওই যে বলে, যতই ভালো খেলোয়াড় হও, পারফরম্যান্স ভালো থাকতে থাকতেই অবসর নেওয়া প্রয়োজন। দিয়েগোর ক্ষেত্রেও সেই সিদ্ধান্ত। বয়সের কথা মাথায় রেখেই তার কাঁধে বংশরক্ষার বিশাল ভারটা আর রাখতে চান না পরিবেশবিদরা। ফলে, ঘরের ছেলের এখন ঘরে ফেরার সময়।

তবে সান দিয়েগোর চিড়িয়াখানায়, বন্দিজীবনে আর মোটেই ফিরতে হচ্ছে না দিয়েগোকে। সে ফিরবে ইকুয়েডরের প্রত্যন্ত দ্বীপ এসপানোলার বুকে, তার প্রিয় চারণভূমিতে। শুধু দিয়েগো একা নয়, গালাপাগোসের ন্যাশনাল পার্ক থেকে আরও ২৫টি কচ্ছপকে পাঠানো হল এসপানোলাতে। তাদের জন্য তৈরি হয়েছিল বিশেষ নৌকো। নৌকোতে ওঠার আগে অবশ্য কয়েকদিনের কোয়ারান্টিনের গপ্পো! না না, করোনাভাইরাসের জন্য নয়! গালাপাগোস ন্যাশনাল পার্কে থাকার সময় দিয়েগো ও তার সঙ্গীরা যে ধরনের গাছ বা ক্যাকটাস খেয়েছে, তার কয়েকটা এসপানোলা দ্বীপে পাওয়া যায় না। এখান থেকে কোনও বিজাতীয় বীজ যাতে তারা প্রত্যন্ত সেই দ্বীপে নিয়ে গিয়ে সেখানের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট না করে, তা নিশ্চিত করতেই এই কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থা।

দিয়েগোদের যাত্রার কথা ঘোষণা করতে চোখ জলে ভরে এসেছিল ইকুয়েডরের পরিবেশমন্ত্রী পাওলো প্রোয়ানোর। বললেন, ‘গালাপাগোস ন্যাশনাল পার্ক তাদের ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সমাপ্ত করল। কয়েক দশক ধরে বন্দিদশায় বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে, নিজের প্রজাতিকে অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচিয়ে ঘরে ফিরেছে দিয়েগো। আর এসপানোলে তাকে হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছে।’

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সম্ভবত কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজেই গালাপাগোস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দিয়েগোকে। দীর্ঘ এতগুলো বছর পর নিজের চারণভূমিতে ফেরা। ছোটবেলার সেই গাছ, সেই আকাশ— নিজের ভূমি! কিন্তু সেখানে আপন মনে ঘুরতে ঘুরতে কখনও কি সেই ৮০০ ছেলেমেয়ের জন্য মনখারাপ হবে না দিয়েগোর? হয়তো হবে। হয়তো চোখ জলে ভরে উঠবে ‘ভিকি ডোনারে’র, শুধু তা দেখার কেউ থাকবে না!

তথ্য সূত্রঃ ইন্ডিয়া টাইমস

Related posts

কম্পিউটারে বাংলায় যুক্তবর্ণ লেখার নিয়ম

News Desk

চোখ যে মনের কথা বলে : চোখের রঙে কি মানুষ চেনা যায়!

News Desk

মোবাইল রেফ্রিজারেশন প্রযুক্তির উদ্ভাবক ফ্রেডরিক ম্যাককিনলি জোন্স

News Desk

Leave a Comment