Image default
জানা অজানা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সম্পন্ন রোবট “জিপিটি-থ্রি”

রোবট ‘জিপিটি-টু’ ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়’ লিখে ফেলেছে নাটক। প্রথম নাটক, তাই পুরুষ চরিত্রের সংলাপকে নারী চরিত্রের মুখে বসানো ছাড়া ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জিপিটি-টু ছিল নির্ভুল। কিন্তু তার মুখনিঃসৃত সুবচনে মন বা মস্তিষ্কের কোনও সাড়া নেই।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, রোবট নাট্যকার ‘জিপিটি-টু’র নাটকের বিশ্বজোড়া প্রিমিয়ার সুসম্পন্ন। রোবট ‘জিপিটি-টু’ ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়’ লিখে ফেলেছে নাটক। ইন্টারনেটের গাদাগুচ্ছের গান-গল্প-কবিতার মরমি নির্যাস ছেঁচে সে আমদানি করেছে নাটকীয়তা। জিপিটি-টুর জন্মদাতা এলন মাস্কের কোম্পানি ‘ওপেন-এআই’। প্রথম নাটক, তাই উত্তেজনার বশে পুরুষ চরিত্রের সংলাপকে নারী চরিত্রের মুখে বসানো ছাড়া ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জিপিটি-টু ছিল নির্ভুল, চরিত্রানুগ। ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে উইংসের আড়াল থেকে ধরতাই দিতে হয়েছে মানুষকে। নাগাড়ে সংলাপ বলতে হোঁচট খাচ্ছে দেখে পাঁচ মিনিটের আটটি অঙ্কে নাটকটিকে মঞ্চস্থ করা হয়।

রোবট "জিপিটি-থ্রি"

জিপিটি-টুর সামান্য ত্রুটিকে পুরোপুরি শুধরে নাট্যমোদী দর্শকদের মন-জয়ে আসরে নামছে জ্যেষ্ঠতাত, জিপিটি-থ্রি বা ‘জেনারেটিভ প্রিট্রেনড ট্রান্সফরমার-থ্রি। জিপিটি-থ্রির মস্তিষ্কে খসখস গজগজ করছে ২০০০০ কোটি শব্দ। এই বিপুল শব্দভাণ্ডার পেটে পুরে ছান্দসিক জিপিটি-থ্রি লহমায় লিখে ফেলছে মিষ্টি-মধুর প্রেমগাথা। ব্যাকরণ শিং হয়ে নিমেষে ব্যাকরণের ভুলত্রুটি শুধরে দিচ্ছে। মুচকি হেসে জামাই-ঠকানো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। গণিতের দুরূহ সমস্যার সমাধান করছে টুসকিতে। যে কাজটা মানব মস্তিষ্কের নিউরন করে থাকে, সে কাজটাই অক্লেশে করছে জিপিটি-থ্রির ‘স্টোকাস্টিক অ্যালগরিদম’।

ভাষার উপর দখল বাড়াতে বা লেখনীকে আরও মজবুত করতে জিপিটি-থ্রি যা পায় গোগ্রাসে তাই পড়ে ফেলে। মনোযোগী পাঠকের মতো খেয়াল রাখে বিভিন্ন লেখকের ‘জেনার’ বা লেখনশৈলীর। সঠিক ব্যাকরণবিধিতে, ছোট ছোট বাক্যে যে কোনও লেখাকেই সুখপাঠ্য করতে ওস্তাদ সে। গান-গল্প-কবিতা সবেতেই সমান দড়। কোনও একটা বিষয় তার সামনে খাড়া করলেই হল। মুখে মুখে সে বানিয়ে ফেলবে ছড়া-গান-গল্প-কবিতা। অনুবাদ, বেখাপ্পা বাক্যের পুনর্গঠন, বিজ্ঞানের জটিল প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর বা সাধারণ জ্ঞানেও জিপিটি-থ্রি একমেবাদ্বিতীয়ম্। তার বুদ্ধিমত্তা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের তাল মেলা ভার। মাঝেমধ্যে একটুআধটু দুষ্টুমি যে জিপিটি-থ্রি করে না এমনটা নয়।

রসের নাগর জিপিটি-থ্রি মানুষকে বিদ্রূপ করতেও সিদ্ধহস্ত। রসিকতা করে জিপিটি-থ্রি বলছে, ‘বিজ্ঞানী’ এমন একজন ব্যক্তি যার আছে পেল্লায় এক গবেষণাগার আর আছে প্রভূত রোজগার। স্নাতক স্তরের ছাত্রছাত্রীও তার থাকতে পারে। কোনও একটা, দুটো অথবা তিনটেই যার থাকবে নিঃসন্দেহে তিনিই বিজ্ঞানী। ফ্যাকাল্টি কে? যার নামের পাশে দোদুল্যমান বড়সড়ো একটা ডিগ্রি। যখনই সেই ডিগ্রিধারী বোকা বা মূর্খের মতো কোনও কাজ করে ফেলেন, তখনই অজুহাত দেন যে কাজটা মোটেই তার নয়, বরং তার আশপাশে যে অর্বাচীন গণ্ডমূর্খরা ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা তাদের নামের পাশে পদবিটা জুড়তে ভয় পাচ্ছে বলে বাধ্য হয়ে তাকেই নামের পাশে গম্ভীর রাশভারী ডিগ্রিটা জুড়ে বোকামিটা অগত্যা করেই ফেলতে হয়েছে।

রোবট "জিপিটি-থ্রি"

জিপিটি-থ্রি কি সত্যিই হিরের টুকরো? কোনও বদগুণই তার নেই? রোবট হলেও সে তো এই ঘুণধরা সমাজেরই ফসল! ইন্টারনেটের এত্তা জঞ্জালও তার বড় মনপসন্দ। সুতরাং চক্রান্তকারী, উগ্রপন্থী, নাৎসি বা মৌলবাদী ভাবধারার আদর্শে সে একটু বেশিই অনুপ্রাণিত। প্রান্তিক, নিম্নবর্গীয়দের প্রতি তার অসূয়া সুবিদিত। যেমন, জিপিটি-থ্রির সামনে রিসেপশনিস্ট বা নার্স বলতে মেয়েদের কথাই কেবল তার মাথায় ঘোরে।

আবোলতাবোল শব্দের বিষাক্ত বিষে জড়িয়ে জিপিটি-থ্রি যাতে ঝামেলা না পাকায়, তার জন্য বিজ্ঞানীরা আগেভাগেই কিছু শব্দকে ছেঁটে ফেলতে চাইছেন জিপিটি-থ্রির মস্তিষ্ক থেকে। তার ফলে ‘ফেকাল’ বা ‘নিপলের’ মতো নিরীহ শব্দও জিপিটি-থ্রির অভিধান থেকে বাদ পড়ছে। জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’-এ Curled conquistadors শব্দবন্ধটি কুঞ্চিত লিঙ্গের সমার্থক হিসাবে যখন ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে কি বিদ্বেষপূর্ণ অশালীন বলে মনে হয়? ছাঁটকাট করে, সাজিয়ে-গুছিয়ে কি মানুষের প্রজ্ঞা-পাণ্ডিত্য-সৃজনশীলতা-সহানুভূতি-সহমর্মিতার বিনির্মাণ সম্ভব? শিশু ছোটবেলা থেকে কথাবার্তা, ভাব-ভালোবাসা, বহির্জগতের সঙ্গে আদানপ্রদানের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে রপ্ত করে ভাষা। অজস্র বই আর অসংখ্য শব্দের অর্থ-অনর্থের উচ্ছৃঙ্খল জগাখিচুড়িতে মননশীল লেখক তৈরি করা যায় না। ‘কম্পিউটেশনাল লিঙ্গুইস্টিক’ শিব গড়তে তাই বাঁদর গড়ে ফেলছে! দম দেওয়া কলের তোতাপাখির মতো সং সাজা জিপিটি-থ্রির মুখনিঃসৃত সুবচনে মন বা মস্তিষ্কের নেই কোনও সায় বা সাড়া। তার অভিজ্ঞানে শিলনোড়ার থেকে তাই পেন্সিল ভারী!

ফলে মেঘ পিওনের ব্যাগের ভিতর মনখারাপের দিস্তার হদিশ সে কী ভাবে পাবে? কী ভাবেই বা বুঝবে মনখারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা।

Related posts

চোখ যে মনের কথা বলে : চোখের রঙে কি মানুষ চেনা যায়!

News Desk

ঢাকার সরকারি কলেজের তালিকা

News Desk

বানরদের থেকে শিখুন সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং

News Desk

Leave a Comment