Image default
খেলা

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের গল্প

প্রথম আন্তর্জাতিক টি টুয়েন্টি ম্যাচটি ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভারত ছিলো এই ফরম্যাটের ঘোর বিরোধী। তাই এই ফরম্যাট নিয়ে কোনও আগ্রহই ছিলো না তাদের। সুতরাং, আইসিসি যখন টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপই আয়োজন করে বসে তখন ঘোর আপত্তি জানায় ভারত। তখন তাদের কাছে স্রেফ এনার্জি অপচয় ছাড়া কিছু ছিলো না। তাই আইসিসির চাপে পড়ে যখন তারা দল পাঠাতে বাধ্য হয় তখন তারা দ্বিতীয় সারির দল পাঠায় বিশ্বকাপে। আর সে দল ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিলে ভারতীয় ক্রিকেট বদলে যায় চিরদিনের মতো। আজকে আজরা সেই ঐতিহাসিক ফাইনালের গল্পই শুনবো।

ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয় ভারতের। প্রথম পর্বেই বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার কাছে হেরে বাফ পরে তারা। এর ফলে ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক পরিবর্তন আসে। কিন্তু টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য যখন দল ঘোষণা করা হলো তখন আসলো বিশাল সব চমক। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, জহির খানের মতো সিনিয়রদের বিশ্রাম দেওয়া হলো। রাহুল দ্রাবিড়কে সরিয়ে অধিনায়ক করা হলো মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। ধোনি পুরো টুর্নামেন্টে তার অসাধারন বুদ্ধিমত্তার সাথে অধিনায়কত্ব করেন।

সে সময় খুব বেশি টি টুয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও ধোনীর ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা ও তরুনদের দারুন পারফোমেন্সে ফাইনালে ওঠে ভারত। ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের। সে টুর্ণামেন্টে পাকিস্তানের হয়ে এক নতুন তারকার। নাম মেসবাহ উল হক। টি টুয়েন্টি তরুণদের খেলা এই ধারণায় চপেটাঘাত করে দুর্দান্ত খেলেন সে সময় ৩৩ বছর বয়স্ক মেসবাহ। তার ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ ফিনিশিং করার দক্ষতাই পাকিস্তানকে ফাইনালে তুলে আনে। তাই ফাইনালটা পরিণত হয় দুই ঠান্ডা ব্যক্তিত্বের নার্ভের লড়াইয়ে, একদিকে ধোনি এবং আরেকদিকে মেসবাহ।

২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭। জোহানেসবার্গের ফাইনালে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ধোনি। উদ্ভোধনী ব্যাটসম্যান গৌতম গম্ভীর ভালো শুরু করেছিলেন, তবে সঙ্গী ব্যাটসম্যানদের ব্যার্থতায় ইনিংস বড় হচ্ছিল না। ফলে একদিকে গৌতম গম্ভীর ক্রিজ ধরে রাখলেও অপরদিকে চলছিলো যাওয়া আসার মিছিল। শেষের দিকে রোহিত শর্মার ১৬ বলে ৩০ রানের ক্যামিওতে লড়াই করার পুজি পায় ভারত। গম্ভীরের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ বলে ৭৫ রানের অসাধারণ ইনিংস। ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় পাচ উইকেটে ১৫৭। সে বিশ্বকাপে রান তোলার হিসেব দেখলে রানটা একটু কমই মনে হচ্ছিলো।

১৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। তবে ইমরান নাজির এক প্রান্তে ঝড় তুলে দলকে রেখেছিলেন কক্ষপথে। তিনি আউট হয়ে গেলে বিপদে পরে যায় পাকিস্তান। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন টুর্নামেন্ট জুড়ে অসাধারন ব্যাটিং করা মিসবাহ উল হক। টেল এন্ডারদের নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়েই যাচ্ছিলেন। যোগিন্দর শর্মার শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৩ রান আর ভারতের দরকার ছিল ১ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন মিসবাহ। প্রথম ২ বলে ৭ রান হওয়ায় শেষ ৪ বলে দরকার ছিল ৬ রান। এই সময় ধোনী তার অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং ঝুকি নেওয়ার সাহসের প্রমাণ দেন। তিনি জানতেন মেসবাহ স্কুপ শট খেলে ফাইন লেগ দিয়ে রান বের করতে পছন্দ করেন। তাই ধোনি শ্রীশান্তকে শর্ট ফাইন লেগে দাড় করিয়ে দেন। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, মেসবাহ যদি স্কুপ খেলেন তাহলে হয় শ্রীশান্তের মাথার উপর দিয়ে বল চলে যাবে এবং ভারত হেরে যাবে। আর যদি স্কুপ খেলতে গিয়ে মিস টাইম হয় তাহলে শ্রীশান্তের হাতে ক্যাচ হয়ে পাকিস্তান ম্যাচ হেরে যাবে।

মেসবাহ শেষ পর্যন্ত ধোনির পাতা ফাদেই পা দিলেন।। স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন শর্ট ফাইন লেগে। শ্রীশান্তের হাতে ক্যাচ দিয়ে তিন বল হাতে রেখেই পাচ রানে ম্যাচ হেরে যায় পাকিস্তান। দুর্দান্ত ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ফাইনালে অসাধারন বোলিং এর পুরুষ্কারস্বরুপ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ইরফান পাঠান।

এই ম্যাচের পরেই ভারতে আসে টি টুয়েন্টির জোয়ার। ধোনি পরিণত হোন জাতীয় নায়কে। ভারতের ক্রিকেট বোর্ড টি টুয়েন্টি নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। শুরু হয় নতুন ইতিহাস। প্রতিদিন এমন মজার গল্প জানতে সাবস্ক্রাইব করুন বাংলা ডায়েরি।

Related posts

ক্যাটলিন ক্লার্ক আটলান্টা থেকে অন্য এক উত্তেজনাপূর্ণ মুহুর্তে রাইন হাওয়ার্ডের সাথে চিপবি পান

News Desk

L.A. was once ‘Drag City.’ Now the area’s last speedway is closing after a night of muscle car mayhem

News Desk

এজন্য নতুন রোহিত শর্মা নম্বর 1 প্লেট 1

News Desk

Leave a Comment