শেষ হলো এক লড়াই
খেলা

শেষ হলো এক লড়াই

ব্রেইন টিউমার। প্রাণঘাতি এই রোগটি একই দিনে কেড়ে নিলো বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারকে। দু’জনই দুই প্রজন্মের, কিন্তু যাওয়ার বেলায় মিলে গেলেন এক বিন্দুতে। শেষ হলো দু’জনের লড়াই। দীর্ঘদিন যুদ্ধের পর মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকালে হার মানেন সামিউর রহমান সামি ও সন্ধ্যার দিকে মোশাররফ হোসেন রুবেল। এই দুই ক্রিকেটারের মৃত্যুতে ক্রিকেট পাড়ায় বইছে শোকের মাতম।

৬৮ বছর বয়সী সামি উঠতি ক্রিকেটপ্রেমিদের কাছে খুব একটা পরিচিত নন। ১৯৮৬ এশিয়া কাপ দিয়ে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ওয়ানডে ম্যাচে টাইগার একাদশে ছিলেন সামি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ম্যাচেও খেলেন এই বাহাতি পেসার। কিন্তু দুই ম্যাচের একটিতেও উইকেটের দেখা পাননি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সামির সূর্য অস্ত নামে সেখানেই।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ার ছিল উজ্জ্বলতায় ভরপুর। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ মাতিয়েছেন আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের মতো বনেদী ক্লাবের হয়ে। খেলা ছেড়ে মনোযোগ দেন আম্পায়ারিংয়ে। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৬৬টি ম্যাচে আম্পায়ারিং ও ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শুধু ক্রিকেটেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি  সামি। ঢাকা স্পার্সের হয়ে বাস্কেটবলেও মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি।



রুবেলের ধ্যানজ্ঞানটা অবশ্য ছিল শুধু ক্রিকেটকে ঘিরেই। ক্রিকেট পাড়ায় ভদ্র ক্রিকেটার হিসেবে বেশ সুনাম কাড়েন তিনি। বরা বরই শান্ত প্রিয় প্রকৃতির। ক্রীড়াবিদ হিসেবে সুযোগ মেলে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
প্রফেশনাল ক্রিকেটে হাতেখড়ি ২০০১-০২ মৌসুমে। তখন থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফরমার। বাঁহাতি অর্থোডক্স বোলার হিসেবে নিয়ন্ত্রিত বোলিং যেমন ঘোল খাইয়েছেন ব্যাটারদের, তেমনি রান খরচের বেলায় দেখিয়েছেন কিপ্টেমি। ধারাবাহিকভাবে ফর্ম ধরে রাখার কারণে ২০০৮ সালে প্রথমবার সুযোগ পান বাংলাদেশ জাতীয়  দলে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই তিন ওয়ানডে খেলার পর জাতীয় দল থেকে একপ্রকার হারিয়েই যান রুবেল।

একদিন হুট করেই অবসর নিয়ে যোগ দেন ভারতের বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগ আইসিএলে। ফলে নিষিদ্ধও হতে হয়। তবে দুই বছর পর আবারও ফিরে আসেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। বোলিংয়ের সেই ধার তখনো হারাননি। তাকে বাদ দিয়ে দল সাজানোটা প্রায় অসম্ভব ছিল। ২০১৩ বিপিএল ফাইনালে ম্যাচ সেরা হয়ে চ্যাম্পিয়ন করেছেন ঢাকা গ­াডিয়েটর্সকে। সেই একই আসরে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ আনা হয় বাঁহাতি এই স্পিনারের ওপর। আইসিসির পক্ষ থেকে আটমাসের নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুই মাসের মাথায় সেই কলঙ্ক থেকে মুক্তি পান রুবেল।


একমাত্র সন্তানের সঙ্গে মোশাররফ হোসেন রুবেল, ছবিটা এখন কেবলই স্মৃতি

আবারও স্বপ্ন বুনেন জাতীয় দলে খেলার। অবশেষে তা সত্যি হয় ২০১৬ সালে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই সিরিজে আট বছর পর আবারও বাংলাদেশের জার্সি গায়ে পরে খেলতে নামেন তিনি। পরের সুযোগটির জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরও দুই বছর। পেশাদার ক্রিকেটে তার শেষ ম্যাচটা ২০১৯ বিপিএলে কুমিল­া ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে।

একই বছর টিউমার ধরা পড়ে তার মস্তিষ্কে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় সেরে উঠলেও নতুন করে ফের টিউমার ধরা পড়ে। দেশে ও দেশের বাইরে চিকিৎসা করালেও দিন যত যাচ্ছিল ততই বেড়েই উঠছিল তার মৃত্যুর শঙ্কা। তার এই দুর্দিনে পাশে ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসানের মতো সতীর্থরা। কিছুদিন আগে হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় ফিরলেও মঙ্গলবার চিরকালের জন্যই সবাইকে ছেড়ে চলে যান রুবেল। মঙ্গলবার রাত ১০টায় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ৪০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের জানাজা। মৃত্যুকালে স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে যান তিনি।

Source link

Related posts

প্রো রেসলিং কিংবদন্তি বুকার টি “ডাব্লুডব্লিউই এলএফজি” এর আগে পরবর্তী বড় তারার জন্য প্রত্যাশা রাখে

News Desk

আবার স্কোয়াডে, টিউসকার হার্নান্দেজ একটি অপরাধ সরবরাহ করে যেখানে ডডজাররা অ্যারিজোনাকে পরাভূত করে

News Desk

প্রাক্তন মার্লিনস মালিক জেফরি লরিয়া বলেছেন ডেরেক জেটার টিম সিইও হিসাবে অন্যান্য জিনিসের মধ্যে ‘ক্ষেত্রটি নষ্ট করেছেন’

News Desk

Leave a Comment